শেরপুরে মিষ্টি আলুর ফলন ভালো, দামও ভালো

শেরপুরের চরাঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষেতে এ বছর মিষ্টি আলুর ফলন ভালো হয়েছে; দামও ভালো। মিষ্টি আলু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।

শেরপুর প্রতিনিধিমো. আব্দুর রহিম বাদলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2017, 07:03 AM
Updated : 11 March 2017, 07:03 AM

সদর উপজেলার কামারের চর, চরমোচারিয়া, চরপক্ষীমারী, বলাইয়ের চর ও লছমনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও চাষীরা মাটি খুঁড়ে আলু তুলছেন, কোথাওবা চলছে বাছাই ও বেচাকেনার কাজ।

সাহাব্দীর চর দশআনী গ্রামের জামাল উদ্দিন মিষ্টি আলু চাষ করেছেন ১০ শতাংশ জমিতে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রায় ৩৫ হাজার টাকার আলু বিক্রি করিছি। বালো লাভ হইছে।”

চরভাবনা গ্রামের আব্দুল হান্নানও খুশি।

তিনি বলেন, “আমার কামারচর এলাকায় মিষ্টি আলুর আবাদ বালো অইছে। ক্ষেত তনে পাইকাররা সাড়ে ৩০০ টেহা মণ মিষ্টি আলু কিন্না নিয়া যাইতাছে।”

প্রতিমণ মিষ্টি আলু গড়ে ৩৫০ টাকায় কিনে পাইকাররা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করছেন গড়ে সাড়ে ৪০০ টাকায়।

কামারপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, “মিষ্টি আলু কিনলাম। কিন্না বাছাই করলাম। পরে বস্তায় ভরলাম। অহন ঘোড়ার গাড়ি দিয়া বাজারে নিয়া যামু। তারপর ট্যারাক ভইরা ঢাহা নিয়া বেচমু।

“সব খরচ বাদে মিষ্টি আলুর ব্যবসায় কেজিতে প্রায় এক টেহা লাভ হয়।”

সোবহান আলীর বাড়ি ৬ নম্বর চর এলাকায়। তিনি একটি ক্ষেতে এসেছেন আলু কিনতে। কেনার পর বাছাখোটা করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করবেন বলে জানালেন।

চরভাবনা গ্রামের ছানুয়ার হোসেন ছানু বলেন, “বস্তা ভরা, গাড়ি ভাড়া, আরও সব খরচ-বরচ বাবাদে প্রতি কেজির দাম পড়ব ৯-১০ টাকা। আর বেচতে পারব ১০-১১ টাকা। মণপ্রতি ২৫-৩০ টেহা লাভ থাকব।”

মিষ্টি আলু তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী, টাঙ্গাইল ও সাভারসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন বলে জানান।

ফসল তোলার মৌসুমে কৃষিশ্রমিকদের মধ্যেও বাড়ে ব্যস্ততা।

মিষ্টি আলু বাছাই করে বস্তায় তুলে দেওয়ার কাজ করেন মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, “সকালে আহি, বিকালে যাই। মিষ্টি আলু বাছাই কইরা দৈনিক ১৫০ টাকা ময়না পাই।”

আবেদা খাতুন বলেন, “একজনের কামাইয়ে সংসার চলে না তো, তাই আলু তুলার কাজ করি। ১৫০ টেহা ময়না পাই। এ দিয়া ঘরে-বাইরে কোনো রহমে চলি।”

মিষ্টি আলুতে কৃষিশ্রমিকের চাহিদা অন্য ফসলের তুলনায় কম। যাদের গরু আছে কিন্তু মিষ্টি আলু চাষ করেন না তারা আলু বাছাই করে দেওয়ার বিনিময়ে পান ডগা-লতা।

চরভাবনা গ্রামের কৃষক সুলতানুর রহমান বলেন, “আমি আইছি এহানে মিষ্টি আলুর লতা নেয়ার জন্যে। লতা নিয়া গরুরে খাওয়ামু। আলু তুইলা দিয়া বিনিময়ে লতা নিয়া যাইতাছি।”

এ গ্রামের হাবিবুর রহমানসহ আরও অনেকেই আলু তুলে দিয়ে ডগা-লতা নিয়ে যেতে দেখা যায়।

চলতি বছর মিষ্টি আলুর দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি বলে জানান চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশরাফ উদ্দিন জানালেন দাম বেশি হওয়ার কারণ।

“এ বছর মিষ্টি আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫০ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে মাত্র ৯৩ হেক্টরে।”

মিষ্টি আলুর আবাদ দিন কমে যাচ্ছে শেরপুরে। এর কোনো কারণ বলতে না পারলেও আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।