দৃষ্টিনন্দন রূপে নগরের ঘরে সোনালি আঁশ

দৃষ্টিনন্দন পোশাক থেকে সৌখিন গৃহস্থালি পণ্য-সব কিছুতেই পাটের ছোঁয়া, সোনালী আঁশ খ্যাত যে পণ্য দড়ি আর বস্তা-ই এতদিন সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2017, 04:40 PM
Updated : 10 March 2017, 06:47 AM

প্রথমবারের মতো উদযাপিত ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে শুরু হওয়া জাতীয় পাটপণ্য প্রদর্শনীতে সাজানো হয়েছে বাহারি নকশার এই পণ্যের পসরা। পাটের কারুকাজ খচিত জামদানি পরে সকালে ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাটের এসব পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের প্রচণ্ড আগ্রহের কথা জানান বিভিন্ন স্টলের কর্মীরা।

বিকালে প্রদর্শনীর একটি স্টলে লেইস, কটন মিক্সড ফেব্রিক্সসহ বেশ কিছু পণ্য কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফ্যাশন ডিজাইনার তাসমিনা, প্রীতিসহ বেশ কয়েকজন। কিন্তু সকাল থেকে বিক্রিতে ব্যস্ত নরসিংদীর মাহবুব জুটেক্সের ব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক ক্রেতার চাহিদা মতো পর্যাপ্ত পণ্য দিতে পারছিলেন না।

ক্রেতাদের আশ্বস্ত করে মাহবুব বলেন, “আজকে প্রডাক্ট প্রায় শেষ। আপনারা চাহিদার কথা বলে যান। কালকে নিশ্চয় পাবেন। আর বেশি পণ্যের প্রয়োজন হলেও জানান, দু-চারদিন পরে পাবেন।”

এই চিত্র চোখে পড়ে অন্যান্য স্টলেও। একটি স্টলের সামনে কথা হয় ফ্যাশন ডিজাইনার প্রীতির সঙ্গে, পোশাকে পাটের ফেব্রিক্স যোগ করে বাজারে ছাড়েন তিনি।

প্রীতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে স্নাতক করার পর ঘরে বসেই কাজ শুরু করেন তারা কয়েকজন। শাড়ি, থ্রি পিস, কটি, ব্লাউজসহ যে কোনো পোশাকে পাটের নকশা যুক্ত হলে এর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

পাশে ফ্যাশন হাউজ এফএমএস এর স্টলে সাজানো সারি সারি পাটের পোশাক দেখিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বাজার থেকে ৩০/৩৫ টাকা গজে কাপড় কিনে বিভিন্ন পোশাক তৈরি করি। তবে এর সঙ্গে পাটের ফেব্রিক্স যোগ করলে দারুণ নকশা হয়। তখন দামও পাওয়া যায় কয়েকগুণ বেশি। আজ যে ফেব্রিক্সগুলো কিনলাম এগুলো শাড়িতে বসাব। সৌখিন এসব শাড়ির দামও হবে অন্তত ১০ হাজার টাকা।”

শুধু পোশাক পরিচ্ছদ নয়, ফুলদানি, ঝাড়বাতি থেকে শুরু করে ব্যাগ, জুতা, বিছানার চাদর, বালিশ, কুশন, ডায়েরি, নোট বই, মানিব্যাগ, হাত ব্যাগসহ হরেক রকম তৈজসপত্র তৈরি হয় পাট থেকে। বাংলাদেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এসব পণ্যের বড় বাজার বলে জানান কয়েকজন রপ্তানিকারক।

চলতি অর্থ বছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার আয় হয়েছে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

পাটপণ্যের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাইফেয়ার স্টাইল ওয়ার এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম নাসিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা ইউরোপের বাজারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেন। তাদের ক্রেতাদের কাছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাটের ব্যাগের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

পাটের সুদিন ফিরেছে মন্তব্য করে এই উদ্যোক্ত বলেন, “পাট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল ব্যবসায়ীরা সরাসরি পাওয়া শুরু করেছেন। পাটভিত্তিক বাণিজ্য নিয়ে আমরা এখন অনেক বেশি আশাবাদী। ভবিষ্যতে পণ্যের বৈচিত্র্য ও ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”

আরেক ফ্যাশন হাউজ জারমার্টজের সিইও ইসমাত জেরিন খান বলেন, পাট পণ্যের প্রসার যেভাবে হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে কম দামে কাঁচা পাট রপ্তানি করার আর প্রয়োজন হবে না।

“পাট থেকে অনেক উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি করে দেশেই বিক্রি করা যায়-এ বিষয়টি এই মেলা থেকে আজ স্পষ্ট।”

মেলায় ঘুরতে আসা ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার বাসিন্দা শহীদুজ্জামান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “পাট দিয়ে এতো রঙিন কিছু হতে পারে তা কখন কল্পনাও করিনি। পাটের বহুমুখী ব্যবহারে সত্যিই কৃষির এই শাখায় বিপ্লব ঘটে গেছে।”

আরও দুদিন এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে পারবেন নগরবাসী।