পোশাকে বৈচিত্র্য আনুন, খুঁজুন নতুন বাজার: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে তৈরি পোশাক পণ‌্যে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বাংলাদেশের ব‌্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 09:24 AM
Updated : 25 Feb 2017, 11:09 AM

শনিবার ঢাকা অ‌্যাপারেল সামিট উদ্বোধন করে তিনি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতের শিল্পোদ‌্যোক্তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ানোর এই আহ্বান জানান।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএয়ে উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পোশাক শিল্পের বাজার সম্প্রসারণে উদ‌্যোগী হতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট বাজারের মধ্যে আটকে না থেকে, নতুন নতুন বাজার যাতে খুঁজে পাওয়া যায়; সেই উদ্যোগ নিতে হবে।”

“পোশাকেরও তো বৈচিত্র্য আছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পোশাক মানুষ ব্যবহার করে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমি আমাদের ব্যবসায়ীদের বলব, শুধু এক জায়গায় না থেকে, আপনারাও দেখেন কোন দেশে কোন পোশাকের চাহিদা সব থেকে বেশি। প্রত্যেক সিজনের সাথে সাথে রঙের বৈচিত্র্যও আছে, সেগুলো দেখে আপনারও কিন্তু বৈচিত্রপূর্ণতা আনতে পারেন।”

“আপনারা যদি এটা দেখে করেন, তাহলে কখনোই আমাদের এই শিল্পটা মার খাবে না,” বলেন শেখ হাসিনা।

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ‌্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একমাত্র আমেরিকা আমাদের আমাদের কোনোদিন দিল না। এলডিসি কান্ট্রি হিসাবে আমাদের একটা অধিকার আছে, সেটা তো দিলই না।

“তবুও আমরা আমেরিকাকে ট্যাক্স দিচ্ছি। আমরা বোধহয় তিন বিলিয়নের মতো রপ্তানি করি। আর সাড়ে আটশ মিলিয়ন ইউএস ডলার আমরা তাদেরকে ট্যাক্স দিই।”

“আমাদের ট্যাক্সে আবার তারা চলে; এটা আবার মনে রাখতে হবে,” হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী একথা বলার পর উপস্থিত ব্যবসায়ীরাও করতালি দিয়ে ওঠেন।

তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতটিতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের (যার ৮০ শতাংশই নারী) কাজ করার কথা তুলে ধরে

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপের কথাও তিনি বলেন।

“আমরা শুধু রপ্তানিই করব না। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যাতে বৃদ্ধি পায়, দেশের বাজার যাতে সম্প্রসারণ হয়; সেদিকে লক্ষ্য রেখেও আমরা আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”

পোশাকের মতো সব রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“আমরা আইসিটি পার্ক করছি। ঠিক এভাবে নতুন নতুন ক্ষেত্র, নতুন নতুন আইটেম, কোথায় কী ধরনের বাজার; আমাদের ব্যবসায়ী মহলকে সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। একটা-দুটো দিকে থাকলে চলবে না; একে সম্প্রসারণ করতে হবে।”

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জনে সরকারের পক্ষ থেকে ব‌্যবসায়ীদের সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন সরকার প্রধান।

রাজধানীর যানজটের কথা স্বীকার করে লন্ডনেও সড়কে একই ধরনের সমস‌্যা হওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “গাড়ির ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে যে আমরা সাবলম্বী হচ্ছি, ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হচ্ছে; এটা কিন্তু তারই একটা লক্ষণ।”

যানজট অবসানে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে অনেকগুলো ফ্লাইওভার আমরা করে দিয়েছি। বিআরটি তৈরি হলে আরও একটু সুবিধা হবে।”

পোশাক শিল্পঘন এলাকা আশুলিয়ায় সড়কটি উন্নত করার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী।

“আমি যখন প্রথম প্রাইম মিনিস্টার, তখন ঢাকা আশুলিয়া রাস্তাটা করে দিয়েছিলাম। ওখানে যাদের ইন্ডাস্ট্রি আছে আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম, আমরা পারমিশন দিচ্ছি, আপনারা রাস্তা বানান। আপনারা এলিভেটেড রাস্তা করে নিতে পারেন। শুধু মালিকরা বা ওখানকার যারা গাড়ি নিয়ে আসবেন, তারা ওপর দিয়ে যাবেন আর ট্রাকে মাল লোড হবে। কেউ আর সে উদ্যোগ নেন নাই।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে চাই, সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব আপনাদের।

শুধু ব্যবসা করে পয়সা কামালে হবে না, কিছু কিছু নিজেদেরও বিনিয়োগ করতে হবে।”

যত্রতত্র কারখানা না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা করতে বলেন।

“সারাদেশে ১০০টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। যত্রতত্র না করে একটা জায়গায় সুনির্দিষ্টভাবে তারা ইন্ডাস্ট্রি করতে পারেন। এখান থেকে অন্তত দুটি অঞ্চল আমরা আপনাদের দিতে পারব।”

পোশাকশিল্পকে নিরাপদ করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গৃহীত উদ্যোগের আওতায় ইতোমধ্যে তিন হাজার ৮৬৯টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৯টি কারখানায় ত্রুটি পাওয়া গেছে এবং সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা উন্নয়নে সংস্কার কার্যক্রম চলছে।

সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে উন্নত বিশ্বের ক্রেতা কোম্পানি ও দেশগুলোর সহযোগিতাও প্রত‌্যাশা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়দোন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএয়ের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিজিএমইএয়ের প্রথম সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ টুডে’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।