‘বিক্রি হচ্ছে না’ বলে যারা এতদিন আক্ষেপে ছিলেন তাদের মুখেও দেখা মিলেছে তৃপ্তির আভা, দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না বিক্রয়কর্মীরাও।
গত ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১তম এ বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করেন।
শুক্রবার ২০তম দিনে আগারগাঁওয়ের মেলাপ্রাঙ্গণে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। এদিন বিক্রির পরিমাণও অন্য দিনের তুলনায় চার-পাঁচগুণ বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এই ধারা মেলার শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে বলেও আশা তাদের।
“কয়েকদিন ধরে কিছু বেচাবিক্রি হচ্ছে, শুরুর দিকে তো মন্দা গেছে,” বলেন কলকাতার ব্যবসায়ী আশিক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, গত কয়েক বছর প্রচারণার উদ্দেশ্যে মেলায় অংশ নিলেও এবার লাভের লক্ষ্য ছিল তাদের।
প্রথমদিকে সেই আশা না মিটলেও শেষ প্রান্তে বেচাবিক্রির অবস্থা দেখে মুখে হাসি ফুটেছে আশিকের।
একই অবস্থা ইন্ডিয়ান প্যাভিলিয়নের ব্যবসায়ী আতিফ খানেরও। তার স্টলে সৌখিন বিছানা চাদর, বালিশের কভার, কুশনসহ আরও অনেক পণ্য রয়েছে।
ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই মেলামুখী সড়কগুলোতে ছিল চাপ। বিকালে এ চাপ বাড়ায় সংশ্লিষ্ট সড়কে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দেখা দেয় অচলাবস্থা।
মেলায় আসা অনেক দর্শনার্থীকে মটর সাইকেল কিংবা প্রাইভেটকার পার্কিং করতে না পেরে ফিরে যেতেও দেখা গেছে।
১টি কিনলে ১০টি ফ্রি
শেষদিকে এসে বিভিন্ন স্টলে চলছে ‘অফারের’ ছড়াছড়ি। এর মধ্যে গৃহস্থালি পণ্যের দোকানগুলো হাঁকছে ‘১টি কিনলে ১০টি ফ্রি’।
পূর্ব পাশের অন্তত ৪০টি ক্রোকারিজ পণ্যের স্টলে এই অফার নিয়ে দিনভর শোরগোল করতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। কেউ খালি মুখে, কেউ হ্যান্ড মাইকে আবার কেউ লাউড স্পিকারে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
কেউ কেউ আবার বাসায় পণ্য পৌঁছে দিয়ে টাকা নেওয়ারও প্রস্তাব দিচ্ছেন।
“যারা মেলায় বিভিন্ন পণ্য কিনতে আসেন তাদের অনেকের কাছেই এতটাকা থাকে না, তাই আমাদের কোম্পানি পণ্য বাসায় দিয়ে এসে, পরীক্ষা করে সব পণ্যের গুণগত মান যাচাই করে দেখিয়ে টাকা নিয়ে আসছে,” বলেন বিক্রয়কর্মী পাপ্পু।
তিনি জানান, তার স্টলের মালিকের মতো অন্যরাও নানান প্যাকেজে ক্রোকারিজ পণ্য বিক্রি করছেন এখন।
“কেউ ১৭ হাজার ৫শ’, কেউ ২১ হাজার, আবার অনেকে ২৭ হাজার টাকার প্যাকেজে ওয়াশিং মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, মাইক্রো ওভেন, ডিনার সেট, জুস মেকার, রুটি মেকার, সালাদ তৈরির মেশিন, চায়ের কেটলি, কারি কুকার, ৫ সেট নন স্টিক ফ্রাই প্যান দিচ্ছে,” বলেন তিনি।
এই ধরনের ‘অফার’ দেখে ‘না কিনে পারেননি’ মিরপুরের বাসিন্দা শামীম তালুকদার।
হাতভরতি ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে যাওয়ার পথে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের কথা শুনলে তো মনে হয় অনেক জিতেছি। এত বেশি বলছে, এত আইটেম দেখাচ্ছে, হিসাব করে রাখা কঠিন। দেখি বাসায় গিয়ে হিসাব মেলাব।”
ব্লেজারে ‘আখেরি’ অফার
মেলায় বেচাবিক্রির তালিকায় উপরের দিকে আছে শীতের কাপড়ও। ব্লেজারের দোকানগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। মেলাফেরত অনেকের হাতেও শোভা পাচ্ছিল এক বা একাধিক ব্লেজারের প্যাকেট।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ব্লেজারের ব্যবসায় চাঙ্গাভাব চলছে। এজন্য ১২শ’ থেকে ২৭’শ টাকার ব্লেজারে স্টলপ্রতি দুইশ’ থেকে চারশ’ টাকা ছাড়ও দিয়েছেন তারা।
“এসব ব্লেজারের মান বেশি ভালো নয়। এখন আখেরি অফার বললেও শেষ দিকে দাম আরও কমে,” বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রবিউল ইসলাম।
ব্লেজারের এই বিক্রি হাসি ফুটিয়েছে বেলাল হোসেনের। এতদিন এলিফেন্ট রোডে শো রুম ছিল তার, এবারের মেলায় বেশি লাভের আশায় নিয়েছিলেন স্টল ভাড়া।
“৭ লাখ টাকা খরচ করে স্টল দিছি, প্রতিদিন স্টলকর্মীদের বেতন দিচ্ছি। এতদিন দর্শনার্থীরা খালি দেখেই চলে যাচ্ছিল, কিনছিল না।
“এখন যেভাবে বেচাকেনা হচ্ছে, তাতে শঙ্কা কেটে গেছে,” বলেন তিনি।