বিদেশি পার্টনারদের আগ্রহেই ইসলামী ব্যাংকে পরিবর্তন: অর্থমন্ত্রী

প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আসার পেছনে বিদেশি অংশীদারদের আগ্রহই মূল কারণ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2017, 12:55 PM
Updated : 23 May 2017, 01:20 PM

তিনি বলেছেন, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক তাদের হাতে থাকা ইসলামী ব‌্যাংকের শেয়ার এক সময় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিল। কিন্তু মালিকানায় পরিবর্তন আসায় তারা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“তাদের প্রেশারেই অনেক কিছু হয়েছে, যে সব পরিবর্তন হয়েছে।”

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে মেট্রপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসলামী ব‌্যাংক নিয়ে কথা বলেন মুহিত।

মালিকানা, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় কয়েক ধাপে পরিবর্তন আনার মধ‌্যে গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২৪০তম সভায় বড় পরিবর্তন আনা হয়।

চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আনা হয়েছে সাবেক সচিব আরাস্তু খানকে। আর ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছেন আরেক সাবেক সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। জামায়াতঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে এতদিন ইসলামী ব‌্যাংকের এ দুটি পদে ছিলেন মুস্তাফা আনোয়ার। তিনি পরিচালক পদও ছেড়ে দিয়েছেন।

এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নান স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করার পর ডিএমডি মাহবুবুল আলমকে নতুন ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আজিজুল হকের জায়গায় অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজকে দায়িত্ব দিয়েছে ব‌্যাংক পর্ষদ। ভাইস চেয়ারম‌্যানের অন‌্য পদে ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-রাজিই আছেন।

ইসলামী ব্যাংকের এই পরিবর্তনের বিষয়ে এক সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আই কান্ট গিভ ইউ কমেন্ট ইয়েট…..। আই হ্যাভ টু ওয়াচ অ্যান্ড আই হ্যাভ টু টক টু নিউ ম্যানেজমেন্ট। আই উইল টক টু দেম শর্টলি। ইট লুকস গুড ইউ সি… আমার কাছে মনে হয়…।”

বড় পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকের কার্যক্রমে বড় কোনো প্রভাব পড়বে কি-না, এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, “না না…। ইসলামী ব্যাংক এখন, এই মুহূর্তে ব‌্যবসার দিক দিয়ে দেশের এক নম্বর ব‌্যাংক। এই কৃতিত্ব ইসলামী ব্যাংকের, তারা পেরেছে।  

“তবে তাদের (ব্যাপারে) প্রশ্ন আগে থেকেও কিছু কিছু ছিল যে, তাদের লাভের টাকা কোথায় যায়। হাউ ইট ইজ ইউজড- এটা নিয়ে প্রশ্ন টশ্ন ছিল।”

মুহিত জানান, ইসলামী উন্নয়ন ব‌্যাংকের প্রেসিডেন্ট প্রায় দুই বছর আগে ওই বিষয়টি তার নজরে আনেন।

“তারপর থেকেই এটা নজরদারির আওতায় আছে। বিদেশি পার্টনারতো একটা চেইঞ্জ হয়েছে। অরিজিনাল পার্টনার ইজ নো লঙ্গার দেয়ার। দিস হ্যাজ বিন টেইকেন ওভার বাই অ্যা নিউ পার্টনার।”

ইসলামী ব্যাংকের বিদেশি উদ্যোক্তা: ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা; ফিন্যান্স হাউস, কুয়েত; জর্ডান ইসলামিক ব‌্যাংক; ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন, দোহা; ইসলামিক ব‌্যাংক, বাহরাইন; ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং, লুক্সেমবুর্গ; আল-রাজি কোম্পানি, সৌদি আরব; শেখ আহমেদ সালেহ জামজুম, জেদ্দা; প্রয়াত ফুয়াদ আবদুলহামিদ আল-খতিব, সৌদি আরব; দুবাই ইসলামিক ব‌্যাংক; পাবলিক ইনস্টিটিউট ফর সোশাল সিকিউরিটি, কুয়েত; মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস, কুয়েত এবং মিনিস্ট্র অব আওকাফ অ‌্যান্ড ইসলামিক অ‌্যাফেয়ার্স, কুয়েত।

প্রতিষ্ঠাকালীন বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ‌্যে বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক ও দুবাই ইসলামিক ব্যাংক তাদের বেশির ভাগ শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে বলে সংবাদমাধ‌্যমের খবর।

ইসলামী ব‌্যাংকের স্থানীয় উদ‌্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ‌্যে ইবনে সিনা ট্রাস্ট, বায়তুল শরীফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ও ইসলামিক ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরোর কোনো প্রতিনিধি এখন আর পরিচালনা পর্ষদে নেই। দেশীয় উদ‌্যোক্তাদের মধ‌্যে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবির নামও রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক একটি দেশীয় ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে চলে যাচ্ছে বলে বাজারে যে গুঞ্জন রয়েছে- সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুহিত বলেন, “ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে চলে যাচ্ছে? আই ডোন্ট নো। আই কান্ট সে। আমি এখনো বলতে পারি না যে কোন কোন গ্রুপ এর মধ্যে ইনভল্ভড আছে।”

শীর্ষ পদে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ইসলামী ব্যাংকে আরও কোনো পরিবর্তন আসছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জানি না। তবে কমন সেন্স বলে, চেয়ারম‌্যান আর এমডি বদলালে বড় পরিবর্তন আসারই কথা।”

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ ব‌্যাংকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির আন্দোলনকারীরা।

জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ ওঠায় ইসলামী ব‌্যাংকের উপর কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিও ছিল। ২০১০ সালে এই ব্যাংকে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মীর কাসেম আলী ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস চেয়ারম্যান। শীর্ষ তিন পদে পরিবর্তন আসায় ব্যাংকটি সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।