‘অর্গানিক’ সবজি নিয়ে গ্রামের চাষিরা ঢাকায়

কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত তাজা শাক-সবজি ন্যায্যমূল্যে সরাসরি রাজধানীর ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে নতুন এক উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

রিফাত রহমান নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2016, 11:51 AM
Updated : 4 Dec 2016, 05:39 PM

সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় দুদিনের এই উদ্যোগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা নিয়ে এসেছেন তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, যেগুলো ক্ষতিকারক রাসায়নিকমুক্ত সম্পূর্ণ জৈবিক উপায়ে তৈরি বলে তাদের দাবি।

রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির মাঠে শুক্রবার শুরু হওয়া কৃষিপণ্যের দুদিনের মেলায় সবজি নিয়ে এসেছেন নড়াইলের কৃষক শাহিনুজ্জমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা চিংড়ির ঘেরের পাশে সবজি লাগাই। ক্ষতিকারক কীটনাশক দেওয়া হয় না, নয় তো আমাদের ঘেরের চিংড়ি মারা যাবে।”

ভোলা থেকে আসা কৃষক আব্দুল মতিন ও আনোয়ার হোসেন জানালেন, তারা ক্ষতিকারক কীটনাশকের পরিবর্তে কম খরচে ‘বায়োনিম’ ও ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করে জৈবিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে থাকেন।

মধ্যস্থতাকারীদের কাছে লোকসান দিয়ে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হয় জানিয়ে আব্দুল মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওদের কাছে আমরা কেজিতে ১৫-২০ টাকা কম পাই। এখানে (প্রদর্শনী) ন্যায্য দাম পাচ্ছি।”

দ্য ইনকিউবেশন সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজ (আইআইসিই) আয়োজিত ‘ফ্রেশ মার্ট সাপ্তাহিক কৃষক বাজার’ নামের এই প্রদর্শনীতে নড়াইল, ভোলা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ২৫টি স্টলে তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি প্রদর্শন করছে।

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্যে উন্মুক্ত থাকবে, যা চলবে শনিবার পর্যন্ত।

মেলায় উপস্থিত কৃষকরা বলছেন, তাদের উৎপাদিত পণ্যে দেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক  ও ফরমালিন নেই। সহনীয় মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে তারা সবজি উৎপাদন করেন।

মেলায় ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় এগ্রোল্যান্ড ফার্মের মালিক  মো.আলিমুজ্জামান মিল্টন ও একিউ এম ফিরোজুল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিল্টন বলেন, “আমরা জাপান থেকে সবজির বীজ এনে থাকি। আমাদের লাউ ও সিম উচ্চ ফলনশীল। এক বোঁটাতে পাঁচটা লাউ হয় এই বীজে।

“আমরা লাভের চিন্তা করছি না, শুধুমাত্র প্রচারের জন্যেই এই মেলায় আসা।”

মেলায় আসা গৃহিণী মুনামির খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিয়মিত বাজার করি, বাজারের সাথে দামে খুব একটা পার্থক্য নেই এখানে। ওরা বলছে, সবজিতে ফরমালিন নেই। সবজি দেখে তো বেশ ফ্রেশ লাগছে, এখন খেলে বোঝা যাবে।”

আরেক ক্রেতা ফায়েজুর আবেদীন বললেন, “এখানে দাম একটু বেশি। কিন্তু এগুলো যেহেতু অর্গানিক উপায়ে উৎপাদিত হচ্ছে, তাই দাম একটু বেশি হবেই এবং দিতেও সমস্যা নেই।”

সকালের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মতলুব আহমেদ।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা গ্রামে গিয়ে তাজা সবজি কিনতে পারি না।এরকম উদ্যোগ নেওয়া হলে কৃষিপণ্যে গ্রামের কৃষকরা বেশি দাম পাবে, অন্যদিকে ক্রেতারা কম দামে তা কিনতে পারবে।”

কৃষিপণ্য সংরক্ষণে প্যাকেজিং ও কম দামে মানসম্মত পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে উৎপাদক-ক্রেতা সরাসরি যোগাযোগের উপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের সহায়তার জন্যে আয়োজিত এই মেলায় অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি।

সংস্থাটি তিন বছর ধরে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার কৃষকদের নিয়ে কৃষিপণ্য প্রদর্শনী, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ বিতরণসহ নানা ধরনের প্রকল্পে কাজ করে যাচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যনির্বাহী পরিচালক হামিদুর রহমান, ইউএসএআইডির ইকোনমিক গ্রোথ অফিসের বাংলাদেশ শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যাট জন কার্টিস ও ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।