‘ঘুষ লেনদেন’: যুক্তরাষ্ট্রে তদন্তের মুখে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড

সহযোগী এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্তের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 08:13 AM
Updated : 29 Sept 2016, 08:14 AM

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ম্যাক্সপাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের ওই ইন্দোনেশীয় কোম্পানি কাজ পেতে দেশটির কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিল বলে কোম্পানির অভ‌্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে। আর ম্যাক্সপাওয়ারের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রাইভেট ইক‌্যুয়িটি ফার্ম।

ব্যাংটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেনজামিন সোমারটপো ইন্দোনেশিয়ার ওই প্রাইভেট ইক‌্যুয়িটি ব্যবসার প্রধান, যার  নাম ম্যাক্সপাওয়ারের পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে রয়টার্সকে বলেছে, ম্যাক্সপাওয়ারে আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়টি তারা ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষকে’ জানিয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী ও পরিচালনাকারী কোম্পানি ম্যাক্সপাওয়ারের সম্ভাব্য ঘুষ লেনদেন ও অন্যান্য অনিয়ম ঠেকাতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যর্থ হয়েছে কি না সে বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এখন তদন্ত চালাচ্ছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর।

তবে বিচার বিভাগের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে ওই তদন্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের একজন মুখপাত্র ইমেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের যে কোনো প্রাইভেট ইক‌্যুয়িটির বিনিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ থাকলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড তা গুরুত্ব দিয়ে দেখে। আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং নিজ্স্বভাবে তদন্ত করেছি।”

এর আগে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইরানের সঙ্গে লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর জরিমানা দিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা করে রেহাই পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

২০১২ সালে ওই ঘটনায় ইরানের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিরুদ্ধে। বলা হয়, শুধু ইরান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা লিবিয়া ও সুদানের সঙ্গেও ব‌্যাংটির লেনদেন ছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে তাদের গুণতে হয়েছিল ৩৪ কোটি ডলার।

অভিযোগ নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ব্যাংকটির লেনদেন তদারকের জন্য সে সময় একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী দুই বছরের মধ‌্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড আবারও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আইন ভাঙলে পুরনো অভিযোগ ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু এরপরও ব্যাংকটির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য বিধি লঙ্ঘনের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়ায় নজরদারির মেয়াদ ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদি এখন মনে করে যে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ‘গুরুতর’ অনিয়ম করেছে, তাহলে পুরো সমঝোতা চুক্তি বাতিল করে ব্যাংকের বিরুদ্ধে নতুন করে ব‌্যবস্থা নিতে পারে।

অরিক, হেরিংটন অ্যান্ড সাটক্লিফ এলএলপির আইনজীবী উইলিয়াম জ্যাকবসন বলেন, “এখন সরকারকে দেখতে হবে- অনিয়মের ওই অভিযোগ কতটা গুরুতর। সেটা নির্ভর করছে নিতান্তই পর্যবেক্ষকের উপর।”

অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার না করলেও ম্যাক্স পাওয়ার দাবি করেছে, বিষয়টি পত্রিকায় ‘আংশিক ও একপাক্ষিক’ভাবে এসেছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগী প্রাইভেট ইকুয়িটি ২০১২ সালে প্রথম ম্যাক্স পাওয়ারে বিনিয়োগ করে। গত বছর নতুন করে ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিকানা নিয়ে নেয়।