প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে এক সংবর্ধনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2016, 05:28 PM
Updated : 22 Sept 2016, 05:34 PM

দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “সেখানে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

“যখন খুশি তখন আপনারা মূলধন নিয়ে আসতে পারবেন, কিন্তু সুদ আনতে পারবেন না।”

জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বুধবার ভাষণ দিয়ে ম্যানহাটানের অভিজাত হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের বলরুমে সংবর্ধনায় যোগ দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাঙালি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।”

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিএনপির সময় বাজেট ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা, আমরা বাজেট ঘোষণা করেছি ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

“…আমাদের রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি।  আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, তখন অনেকেই ব্যঙ্গ করেছিলেন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছি।”

বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি আমাদের দেশ দিয়েছেন। তিনি জীবনের ২৩ বছর সংগ্রাম করেছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে সংগ্রাম শুরু করেন, ’৫২ এ ভাষা আন্দোলন এবং ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ। তার জন্যই আমাদের আজকের সব অর্জন।

“দেশ স্বাধীন করে মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন জাতির পিতা। সেই সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে খাবারের সংকট ছিল, মানুষ ফুটপাতে খেয়েছে, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। মায়ের কোলে অনেক শিশু মারা যেত। কিন্তু তিনি সাড়ে ৩ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনও করেছিলেন।”

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর দেশে ফেরার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ছিল আমাদের মিত্র বাহিনী। তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। জাতির পিতা তিন মাসের মাথায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, ‘কবে আপনার সৈন্য ফিরিয়ে নেবেন?’ ইন্ধিরা গান্ধী তার সৈন্য ফিরিয়ে নিলেন। বঙ্গবন্ধুর কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, “নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হল। কী অপরাধ ছিল তার? দেশ স্বাধীন করাই কি ছিলো তার অপরাধ?  একাত্তরের পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিল। পরবর্তীতে বেঈমান-মুনাফেকরা ক্ষমতায় এলো। বেঈমান মোস্তাক তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ক্ষমতা দখল করলো জিয়াউর রহমান। ’৭১ এর পরাজিত শক্তিকে সে (জিয়া) ক্ষমতায় বসালো।

“যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির অধিকার দিল। সংবিধান রহিত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিল, যে বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সময় ২২ হাজার মামলা হয়েছিল এবং ১১০০ জনকে কে শাস্তিও দেয়া হয়েছিল। জিয়া লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করল।

“তার শাসনামলে ১৯টি ক্যু হয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর শত শত অফিসারকে হত্যা করল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও বন্ধ করে দেওয়া হলো। এরশাদও ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের লালন ও পালন করল, তাদেরকে মন্ত্রী ও এমপি বানাল। খালেদা জিয়াও একই কাজ করলেন। এমনকি ১৯৯৬ সালের ভোট চুরির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদদের সংসদেও নিয়ে আসলেন।”

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর চরিত্রের কোনো বদল হয়নি মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “তাদের কাজই হচ্ছে মানুষ হত্যা, আগুন সন্ত্রাস।”

এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন এবং ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি থেকে টানা তিন মসের হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় প্রাণহানির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।  

তিনি বলেন, “স্কুল পুড়ানোর কারণ হচ্ছে জিয়া ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট পাশ, বেগম জিয়া মেট্রিক দিয়ে দুই বিষয়ে পাশ করেছেন, অন্যদিকে তারেক ইন্টার পাশ করেছে কি না জানি না। সুতরাং তারা যেহেতু পাশ করেনি, তাই তারা চায় না দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক।”

ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতে হবে।”

বিএনপি জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মানি লন্ডারিংয়ে সে আমেরিকার কোর্টেই ধরা পড়েছে। এখন বিএনপি ও জামায়াত সেই অবৈধ অর্থ দিয়ে সরকারবিরোধী লবিং করছে। অপপ্রচার করছে। আপনাদের তাদের অপপ্রচার রুখতে হবে। কারণ আপনারাই আমাদের প্রতিনিধি এবং দেশের রাষ্ট্রদূত।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়া ‘ট্রেন মিস’ করেছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার ভুলের মাশুল তাকেই দিতে হবে। এখন তারা কেঁদে বেড়াচ্ছে তাদের নাকি স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। আসলে ওই সময়ই খালেদা জিয়াকে জেলে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে এতগুলো মানুষ মারা যেতে না, দেশের সম্পদ নষ্ট হত না।”

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা দিয়েছেন ফালুকে। ফালুকে দেওয়া মানেই ওটার মালিক খালেদা। এখন অনেক টিভির টক শোর ‘টক টক কথা’ শুনে কান ঝালাপালা। তারপরেও বলে স্পেস দিচ্ছি না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “ আমাকে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে,  উৎখাতের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার চাওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা। সেই কাজ আমরা করে যাচ্ছি।”

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা তার কারণেই হয়েছে। সে-ই আমার কম্পিউটার শিক্ষক। এবার সে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, মা হিসাবে আমি গর্বিত।