শ্রমিক কল্যাণ তহবিল: টাকা জমা দিচ্ছে না বেশিরভাগ ব্যাংক

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলে টাকা জমা দিচ্ছে না বেশিরভাগ ব্যাংক।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 06:23 PM
Updated : 28 August 2016, 06:23 PM

১ জুলাই থেকে প্রতি একশ টাকা তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩ পয়সা সরকার গঠিত এই তহবিলে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।

তবে বেশিরভাগ ব্যাংক এ নির্দেশ না মানায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার ‘সরকারের নির্দেশনা’ মানতে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার গত ১৬ অগাস্ট  গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি চিঠি লেখেন, যাতে ১০টি ব্যাংক ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে কোনো অর্থ জমা না করার কথা উল্লেখ করা হয়।

সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার ব্যাংকগুলোকে সরকারি নির্দেশনা মানার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠায়।

এতে পোশাক শ্রমিকদের জন্য গঠিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করে সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় খোলা অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রতি একশ টাকা তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩ পয়সা এ অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে এ হিসাবের অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে। শ্রমিকদের কল্যাণে এ তহবিলের অর্থ ব্যয় হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুনের সার্কুলারের সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অনুলিপি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল।

তাতে বলা হয়েছিল, তৈরি পোশাক খাতের এলসি নগদায়নের সময় মোট রপ্তানি মূল্যের শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ অর্থ কেটে সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় খোলা 'সেন্ট্রাল ফান্ড (আরএমজি সেক্টর)' নামে খোলা হিসাবে (হিসাব নম্বর ০৪৪২৬৩৬০০১০১৮) জমা করতে হবে।

একই সঙ্গে স্থানান্তরিত অর্থের বিষয়ে কেন্দ্রীয় তহবিল পরিচালনা বোর্ডের সচিবকে অবহিত করতে বলা হয়।

‘ব্যাংক অ্যাকাউন্ট’ খোলার পর গত ১৭ জুলাই থেকে ১ অগাস্ট এই তহবিলে মোট ৭২ লাখ ২৮ হাজার ৮৮ টাকা জমা হয়েছে বলে চিঠিতে গভর্নরকে জানিয়েছেন শ্রম সচিব।

ট্রাস্ট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, বেসিক, ন্যাশনাল, যমুনা, ইস্টার্ন, জনতা, আইএফআইসি, স্ট্যান্ডার্ড ও সিটি ব্যাংক এই তহবিলে অর্থ জমা দিয়েছে।

তবে বেশি পরিমাণে রপ্তানি বিল নগদায়ন হওয়া ব্যাংক এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটি ব্যাংক এনএ, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউসিবি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালীসহ অন্যান্য ব্যাংক এই তহবিলে কোনো অর্থ জমা করেনি।

“এমনকি এ বিষয়ে কোন প্রতিবেদনও প্রেরণ করেনি,” বলা হয়েছে চিঠিতে।

শ্রম সচিব লিখেছেন, গত জুনে পোশাক শিল্প থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। ওই হিসাবে জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় তহবিলে (শ্রমিক কল্যাণ তহবিল) ৬ কোটি টাকা জমা হওয়া প্রত্যাশিত ছিল।

“এমতাবস্থায়, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে নির্ধারিত অর্থ জমাদান বাধ্যতামূলক করে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করছি।”

শ্রম সচিবের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ স্বাক্ষরিত সার্কুলারে সরকারের নির্দেশনা মেনে ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে’ অর্থ জমা দিতে বলা হয়।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধান অনুযায়ী এই শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়।

অর্থাৎ তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রতিটি চালানের ওপর অর্থ কেটে রেখে এ তহবিল গঠন করা হয়।

বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, এই তহবিলে বছরে প্রায় ৮০ কোটি টাকা জমা হবে। শ্রমিকদের আপৎকালীন প্রয়োজনে এ অর্থ কাজে লাগানো হবে।

এই তহবিল থেকে শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতা বা অঙ্গহানি হলে ৩ লাখ টাকা ও চাকরিরত অবস্থায় অসুস্থতার কারণে স্থায়ী অক্ষম হলে ২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

এছাড়া শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদান এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে তহবিলের অর্থ কাজে লাগানোর কথা রয়েছে।