তেল-চালের দামে ঊর্ধ্বগতি, লাগামহীন রসুন

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় তেল ও চালসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে রসুনের দামে দেখা গেছে লাগামহীন ভাব।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2016, 10:30 AM
Updated : 26 August 2016, 03:54 PM

অবশ‌্য কমেছে শাক-সবজিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম।

হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

হাতিরপুলে মুদি দোকানি জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিল পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারেও দুই ধাপে মোট চার টাকা বেড়েছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানির রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল গত দুই সপ্তাহে লিটারে চার টাকা বেড়ে একশ টাকায় পৌঁছেছে। সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের তেলও প্রতি লিটার ৯৪ টাকা ছিল, এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৯৮ টাকায়।

অবশ্য সিটি গ্রুপের মহাব্যস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, তাদের তীর ব্র্যান্ডের তেল এখনও লিটার ৯৪ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে তারা আর দাম বাড়াচ্ছেন না।

“দাম বাড়ানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও আমরা ঈদের আগে আর দাম বাড়াচ্ছি না। মিল গেইটে প্রতি লিটার ৮৬ টাকাতেই সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলাররা ৯০ টাকা এবং খুচরায় সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪ টাকায়,” দাবি করেন তিনি। 

কারওয়ান বাজারের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা ইমরুল কায়েস জানান, বোতলজাত সয়াবিনের পাশাপাশি খোলা পাম তেলের দামও কেজিতে ৮ টাকা করে বেড়েছে।

মেসার্স খায়ের অয়েল স্টোরের এই বিক্রয়কর্মীর দাবি, মিল পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা খোলা পাম তেল ৭৭ টাকায় বিক্রি করছেন, যা গত সপ্তাহ আগে ৬৮ ছিল।

কারওয়ানবাজার ও হাতিরপুলে নাজিরশাইল ছাড়া সব ধরনের চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।

নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, মিনিকেট ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় ও স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪/৩৫ টাকা কেজি দরে।

হাতিপুলের বিক্রেতা সোলায়মান মিয়া জানান, এক মাস আগেও তিনি ২৮ টাকায় স্বর্ণা চলের কেজি বিক্রি করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা চাল কিনি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে। তারা বলে, সরকার মোটা চাল কিনে, তাই দাম বাড়তি।”

হাতিরপুল বাজারে কেজিপ্রতি তেলাপিয়া ১৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১৩০ টাকায়, রুই ৩০০ টাকায়, কাতল ৩৫০ টাকায়, কোরাল মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।

হাতিরপুলে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৪০ টাকা দেখা গেলেও কারওয়ান বাজারে তা ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আবার কারওয়ান বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম ডজন একশ টাকায় পাওয়া গেলেও হাতিরপুলে বিক্রি হচ্ছিল ১০৫ টাকায়।

গরুর মাংস আগের মতোই কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুলে।

শসা ছাড়া অন্য বাজারে অন্য সব সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। হাতিরপুলে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা ও কারওয়ান বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় শসা বিক্রি হয়।

বন্যার পানিতে অনেক স্থানে শসার ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের এক শসা বিক্রেতা।

রসুনের দাম লাগামছাড়া

১৫ থেকে ২০ দিন আগে আমদানি করা চীনা রসুনের দাম পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ১৬৫ টাকায় উঠেছিল। আর খুচরায় উঠেছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

চলতি সপ্তাহে তা কমতে শুরু করলেও শুক্রবার খুচরা বাজারে দামে তারতম‌্য দেখা যায়নি।

গত সপ্তাহের মতোই ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় প্রতিকেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাজারগুলোতে। 

কারওয়ান বাজারে আল মদিনা স্টোরের বিক্রয়কর্মী জানান, তারা পাইকারি মার্কেট থেকে প্রতিকেজি ১৭০ টাকায় কেনা রসুন এখন ১৮০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারছেন না।

অথচ একই বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ফারুক জানান, চীনা রসুনের দাম তিন সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি ১৬৫ টাকায় উঠলেও তা এখন কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে চীনা ও ভারতীয় রসুনের পাইকারি মূল্য প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা।

ফারুক বলেন, “আমদানি করা রসুনের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় রসুনের দামও খুচরা বিক্রেতারা বাড়িয়ে দিয়েছেন। দাম বাড়ার আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে খুচরা পর্যায়ে দেশীয় রসুন প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন প্রতিকেজি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

“চীনা রসুনের পাইকারি মূল্য কেজিতে ১৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৬৫ টাকায় উঠেছিল। এখন তা আবার কমে ১৫৫ টাকায় নেমে এসেছে,” বলেন মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়ের এই বিক্রেতা।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ফারুক বলেন, ভারতীয় রসুন আসে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে। আর চীনা রসুন আসে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে।

আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহে ঘাটতি কিংবা পণ্য আসতে বিলম্বের কারণে অনেক সময় আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে থাকেন।

চলতি বছরের শুরু থেকে প্যাকেটজাত ও খোলা লবণের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। ২০ টাকা মূল্যের এককেজি লবণের প্যাকেটের দাম বাড়তে বাড়তে এপ্রিলের দিকে পৌঁছে ৩৫ টাকায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খোলা লবণও।

তবে শুক্রবার এসিআই লবণের প্যাকেটের গায়ে ৩৫ টাকার পরিবর্তে নতুন মূল্য দেখা যায় ৩৮ টাকা।

আগামী সপ্তাহ থেকে তা ৪৫ টাকা হবে বলে পরিবেশকরা কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানিদের জানিয়ে গেছেন।

খায়ের স্টোরের ইমরুল বলেন, “চলতি সপ্তাহে এসিআই লবণের এক কেজির প্যাকেটে ৩৮ টাকা মূল্য বসানো হয়েছে। তবে আমরা এখনও ৩৫ টাকাতেই বিক্রি করছি। আগামী সপ্তাহে এক কেজি লবণের প্যাকেটের গায়ে ৪৫ টাকার সিল মারা হবে বলে কোম্পানির লোকজন জানিয়ে গেছেন। সেই ক্ষেত্রে তখন ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।”