জঙ্গি দমনে সরকারের কাজে সন্তুষ্ট ব্যব্সায়ীরা

গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পরও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, এজন্য তারা সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 10:45 AM
Updated : 28 July 2016, 10:45 AM

তারা মনে করেন, বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিলে দুই-একটি সন্ত্রাসী ঘটনার পরও ব্যবসা-বাণিজ্যে তার প্রভাব তেমন পড়বে না।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ছয় ইতালীয় ক্রেতাসহ ১৭ বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশিরা মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল।

তার মধ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরেন। 

মন্ত্রী নেতাদের পাশে নিয়েই বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান। ব্যবসায়ী নেতারাও তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, “গুলশানের ঘটনায় বিস্মিত হয়েছিলাম, কারণ এ ধরনের ঘটনা আমরা আগে ফেইস করিনি। কিন্তু পৃথিবী অবাক হয়ে দেখল, প্রধানমন্ত্রী ত্বরিত ও কত শক্ত হাতে এটা ডিল করেছেন।

“গুলশানের ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন কেনাকাটা হবে না। কিন্তু মার্কেটগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। ট্রাক-বাসের বিক্রি কমেনি।”

গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিটল-নিলয় গ্রুপের কর্ণধার মাতলুব জানান, ভারতের টাটা মটরসের প্রকৌশলীরা এরপরও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

“হিরোর নতুন ফ্যাক্টরি হচ্ছে, তারাও সভা করেছেন। আমি কোনো গ্যাপ দেখতে পাচ্ছি না।”

জঙ্গি হামলার খবর বিবিসি, সিএনএনের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের ফলে যেটুকু নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা দূর করতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

মাতলুব আহমাদ (ফাইল ছবি)

জঙ্গিবাদ মোকাবেলা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়ে তাতে প্রধানমন্ত্রীও থাকবেন বলে জানিয়েছেন মাতলুব।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম মঞ্জুর জঙ্গিবাদকে ‘পৃথিবীর বাস্তবতা’ আখ্যায়িত করে বলেন, “বিদেশি ক্রেতারা দেখতে চাচ্ছে আমাদের রেসপন্সটা কী?

“বাংলাদেশ থেকে যে রেন্সপন্সটা আমরা করেছি এবং ভবিষ্যতে করব, সেটা তুলে ধরা দরকার। ভবিষ্যতেও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, রেন্সপন্সগুলো কী হবে, সেগুলো আরও জোরে বলা দরকার।”

“জঙ্গিদের লাশ যে তাদের পরিবার গ্রহণ করেনি, এটাই কিন্তু প্রকৃত বাংলাদেশ। বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে হবে যে আমাদের দেশের ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ জনগণ এটা গ্রহণ করেনি। এটাই জোর গলার বলতে হবে,” বলেন নাসিম।

বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, “বেছে নিয়ে ইতালীয় ও জাপানিদের উপর আক্রমণ করা হল। এটা আরএমজি সেক্টরকে ধ্বংস করার চক্রান্ত বলে আমি মনে করি।

“তবে আমাদের উপর কোনো অ্যাফেক্ট হয়নি, বায়াররা সহযোগিতা করছেন। আমাদের প্রতিটা ফ্যাক্টরি যেমন চলছিল তেমনই চলছে। এক্সপোর্টের পারফরমেন্স আগের মতোই আছে।”

সেলিম ওসমান (ফাইল ছবি)

“আমাদের জন্য কেউ কেউ মায়াকান্না করে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টের ব্যবসাটা চলে যাবে। যারা বলছেন তারাই কি চলে যাওয়ার জন্য এই কাজটা করছেন”- প্রশ্ন করেন এই তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক।

ঢাকার হোটেলগুলোতে বিদেশি কমে গেছে বলে বিভিন্নজনের বলার প্রতিক্রিয়ায় সেলিম ওসমান বলেন, “জুলাই থেকে অগাস্ট পর্যন্ত কোনো বায়ারই বাংলাদেশে আসেন না। তারা সামার ভ্যাকেশনে ফ্যামিলি নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা ঘুরে বেড়ান।”

গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্ত না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছে, স্বাধীনতার পর এতবড় ঐক্য আগে আর দেখিনি।”

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈন উদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে যে প্যানিক সৃষ্টি করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হাতে দমন করলে বায়াররা যে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে সেই কনফিডেন্সটা আবার ফিরে পাবে।

“অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, তারা এ দেশে থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে না। এমন কিছু করা উচিৎ হবে না যাতে এই সেক্টর কলাপস করে। গত সাত বছর ধরে আমি তুরস্কের কাজ করছি। তারা বলেছেন আসবেন, তবে নিরাপত্তা দরকার। এই সাময়িক ঘটনায় তারা বিলচিত বা শঙ্কিত না।”

বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, জঙ্গি হামলা কিছুটা ‘ধাক্কা’ দিলেও কীভাবে তা মোকাবেলা করা হচ্ছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি ক্রেতাদের কাছে।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান বলেন, “ব্যবসায় তেমন অ্যাফেক্ট হয়নি, ব্যবসা চলছে, ভালোভাবেই চলছে। ইনিশিয়ালি যেটা হয়েছিল তারা আমাদের দেশে আসা নিয়ে শঙ্কিত ছিল।

“তাদের বলি, তোমাদের প্রটেকশন দিয়ে হোটেল নিয়ে যাব, নিরাপত্তা দেব। অন্য দেশে এ ধরনের সাপোর্ট খুবই কম। কল্যাণপুরের অভিযানে শুধু বিদেশি নয়, সবারই কনফিডেন্স বেড়ে গেছে।”

তোফায়েল আহমেদ (ফাইল ছবি)

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতাকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করছেন বলে আবারও জানান।

“বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।”

বিদেশে ক্রেতারা ভারতে চলে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর দেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে তা হচ্ছে না।

জঙ্গিবাদ দমন করে সরকার স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সচেষ্ট বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “বিদেশিরা যারা যেখানে নিরাপত্তা চায় নিরাপত্তা দেব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”