ঈদ: যমুনায় ব্যস্ততা বাড়লেও খরা কাটেনি অনেক দোকানির

ঈদের আগের সপ্তাহে রাজধানীবাসীর কেনাকাটার ধুম পড়লেও  এখনও জমে ওঠেনি  দেশের বৃহত্তম শপিং সেন্টার যমুনা ফিউচার পার্কের ঈদবাজার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 06:13 PM
Updated : 28 June 2016, 07:39 PM

পোশাকের আলোচিত ব্রান্ডগুলোর আউটলেটে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও খরা কাটেনি বলে জানিয়েছেন অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত দোকানের কর্মীরা।

ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডের পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ মুখে যমুনা ফিউচার পার্কের অবস্থান। গুলশান, বনানী, উত্তরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা এলাকার বাসিন্দাদের সহজ যাতায়াতের মুখে থাকা এই মেগামলটি তিন বছরেও পুরোদমে চালু না হওয়ায় বেচাকেনার ব্যস্ততা বাড়েনি বলে ধারণা অনেক দোকানির।

আবার ‘বড় মার্কেটে বড় দাম’ শঙ্কা থেকেও অনেকে সেখানে যান বলে ধারণা তাদের কারও কারও।

যমুনা ফিউচার পার্কের বিশাল ছাদের নিচে অনেক ফ্যাশন হাউস যে ক্রেতা শূন্যতায় ভুগছে তার বাস্তব চিত্র দেখা গেল ‘আল মাসক’ নামের একটি আমদানি পণ্যের দোকানে গিয়ে।

প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট আয়তনের দোকানটিতে আমদানি করা থ্রি পিস, শাড়ি, গহনা-প্রসাধনী সামগ্রীর বড় সংগ্রহ থাকলেও মঙ্গলবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে কোনো ক্রেতার দেখা মেলেনি।

বেচাকেনা নিয়ে হতাশার কথা শোনালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিক্রয়কর্মী।

“বিশাল এলাকা, কোনো ব্লক ভাগ করা নেই, নেই কোনো ম্যাপ কিংবা দিক নির্দেশনা। কাস্টমাররা এক ব্লকে গেলে সেখান থেকে ফিরে অন্য ব্লকে যাওয়ার এনার্জি হারিয়ে ফেলে,” বলেন একজন।

মার্কেটের নিচ তলায় ফ্যাশন হাউস জেন্ট্যালপার্ক-এর ব্যবস্থাপক আরাফাত জানান, ১০ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও তা শুধু মঙ্গলবার ও শুক্রবারই দেখা গেছে।

ঈদে ক্রেতার উপস্থিতি কিছুটা বাড়লেও অন্য সময় আশানুরূপ ক্রেতা পাওয়া যায় না বলে জানান আরেক ফ্যাশন হাউস বাংলার মেলার শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান।

“অনেকের ধারণা এখানে প্রোডাক্টের দাম একটু বেশি হবে। ঢাকায় বাংলার মেলার ১০টা শো-রূম। অন্যখানে যেই দাম, এখানেও সেই দাম। বরং এখানে একই ছাদের নিয়ে দেশ বিদেশের প্রায় সব দোকানই আছে।”

এবারের ঈদে কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি জানতে চাইলে দেশীয় বুটিক হাউজটির এই কর্মকর্তা বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ার ফ্যাশনের কাছে আমাদের দেশীয় ডিজাইনগুলি মার খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি দেশীয় ডিজাইন কখনও বিদেশি পোশাকের তুলনায় খারাপ ছিল না।”

দীর্ঘদিনের পরিচিতি ব্রান্ড কে ক্র্যাফটের ফ্লোর ব্যবস্থাপক বদরুদ্দোজা বলেন, নতুন মার্কেট হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে ক্রেতা উপস্থিতি কিছুটা কম। অনেক দোকান মার খেয়ে গেলেও দেশীয় বড় ব্রান্ডগুলো বেচাকেনা নিয়ে ভালোই আছে।

তার মতে, আড়ং, কে ক্র্যাফট, ইনফিনিটিসহ অন্যান্য ব্রান্ডের শো রূমগুলো থেকে কেনাকাটা করতেই ঢাকা ও ঢাকার বাইর থেকে ক্রেতারা যমুনা ফিউচার পার্কে আসেন। ক্রেতাদের উপস্থিতি খুব বেশি না হওয়ায় অনেক সময় নতুন ও কম পরিচিত দোকানগুলো সমস্যায় পড়ে।

যমুনা ফিউচার পার্কের নিচ তলা, দ্বিতীয় তলাসহ আরও কয়েকটি তলায় পোশাকের শো রুম রয়েছে। পশ্চিমে প্রধান ফটক ছাড়াও ভবনের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে রয়েছে বিকল্প ফটক। এসব ফটক এখনও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। নিচ তলার পূর্ব পাশে সবগুলো দোকানও চালু করা হয়নি। এ নিয়ে হতাশ পূর্ব প্রান্তের কিছু দোকানি। 

পূর্বপাশে আবর্তন ফ্যাশন্সের বিক্রয়কর্মী নাজমুল জানান, ঢাকায় তাদের চারটি শো রূম রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে যমুনায়ই বেচাকেনা সবচেয়ে কম।

সাদা কালো, নগরদোলাসহ পূর্ব প্রান্তের আরও কয়েকটি দোকানের বিক্রয়কর্মীরা বেচাকেনা তেমন জমেনি বলে জানিয়েছেন।

নিচ তলায় রয়েছে দেশের অন্যতম বড় ঘড়ির দোকান টাইম জোন। কেসিও থেকে শুরু করে রাডো, সিলক্স, সিটিজেন, মনট্রেক্স, টাইমেক্স, টাইটানসহ বিশ্বের অন্তত ২০টি কোম্পানির ঘড়ির সংগ্রহ রয়েছে এই শো-রূমে।

পূর্ব প্রান্তের দোকান হওয়া সত্ত্বেও তাদের বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে বলে জানান এই দোকানের কর্মকর্তা আল আমিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই পাশটা অনেকটাই নীরব। শুধু আমাদের দোকান ব্যতিক্রম। কারণ মানুষ অনেক সময় টাইম জোন থেকে ঘড়ি কিনতে যমুনা ফিউচার পার্কে আসেন। তারপর অন্যান্য কেনাকাটাও সারেন।”

ফ্যাশন জগতে নবাগত সেইলর’ র ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জানান, গত ঈদের তুলনায় যমুনা ফিউচার পার্কে এবার তারা বেশি সাড়া পাচ্ছেন। রোজার শুরু থেকেই ক্রেতাদের ‍উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।