বাহারি দেশি পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ‘বেশি’

ঢাকার ঈদের বাজারে শাড়ি-চুড়ি-গয়নার পাশাপাশি বাহারি রঙ আর নিত্য-নতুন নকশার দেশি ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবির দোকানেও বেশ ভিড় পড়েছে।

মাসুম বিল্লাহফয়সাল আতিক ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 06:14 AM
Updated : 25 June 2016, 06:21 AM

আড়ং, লুবনান, প্লাস পয়েন্ট, ইয়োলো, ইজি, সেইলর, জেন্টেলপার্ক, ইউনিক, দেশী-দশ, স্বদেশি, নাইসম্যানসহ ঢাকার ফ্যাশন হাউজগুলো নিজেদের বিপণন কেন্দ্রগুলোতে নতুন নকশা ও সজ্জার পাঞ্জাবি তুলেছে।

শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে প্লাস পয়েন্টের শোরুমে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়, যেখানে পোলো গেঞ্জি ও শার্টের চেয়ে পাঞ্জাবি ও মেয়েদের থ্রি পিসের প্রতি ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ দেখা যায়।

কম্পিউটারে অনবরত ক্যাশ ম্যামো প্রস্তুত করতে থাকা দোকান ব্যবস্থাপকের কথা বলার ফুসরত ছিল না। বিক্রির সার্বিক জানতে চাইলে তিনি ইশারায় দেখিয়ে দেন দূরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক এমএইচ রহমান সুমনকে।

সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবারে মিশ্র সুতি, সিল্ক ও ধুতি কাপড়ের পাঞ্জাবিগুলোতে বেশ কিছু নতুন নকশা স্থান পেয়েছে; রঙের ভিন্নতার দিকেও বিশেষ নজর ছিল ডিজাইনারদের।

তরুণদের রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে ঈদের পাঞ্জাবি তৈরি করা হলেও সব বয়সী মানুষের জন্য রয়েছে প্লাস পয়েন্টের পাঞ্জাবি।

“ঈদে ছেলেদের অন্যসব কেনাকাটার সঙ্গে অন্তত একটি পাঞ্জাবি থাকছেই। সে কারণে শোরুমের প্রবেশমুখেই রয়েছে পাঞ্জাবির ডিসপ্লে। সব রকমের পাঞ্জাবিই বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই হাজার টাকার আশ-পাশের মূল্যের পাঞ্জাবির কাটতি বেশি,” বলেন সুমন।

সব বয়সী মানুষের জামা-কাপড়সহ নিত্য ব্যবহার্য তৈজষপত্রের বিশাল সমারোহ আড়ংয়ের সায়েন্স ল্যাবরেটরির শোরুমে। সিটি কলেজের পাশের একটি ভবনের তিনটি তলাজুড়ে গড়ে উঠা শোরুমের প্রতি তলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পূর্ণ। ভিড় সামলাতে শোরুমটিতে ১৭০ জনের মতো বিক্রয়কর্মী রাখা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।

শাখাটির ব্যবস্থাপক নয়ন বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শেরওয়ানি ছাড়া অন্য সব ধরনের পাঞ্জাবি ও শর্ট কুর্তা বিক্রি হচ্ছে ঈদ বাজারে। সব বয়সী মানুষের পোশাক এখানে আছে।

“এবারে আমরা বিশেষভাবে ছেলে ও বাবার জন্য একই কালার ও ডিজাইনের পোশাক বাজারে এনেছি। আড়ংয়ের পাঞ্জাবিসহ অধিকাংশ পোশাকের থান কাপড় দেশীয় কারখানায় উৎপাদিত,” বলেন বড়ুয়া।

আড়ংয়ে সাতশ টাকা থেকে শুরু করে সাত টাকা টাকা মূল্যের পাঞ্জাবি রয়েছে। এর মধ্যে ১৮শ টাকা থেকে ২৫ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে জানান তিনি।

ফ্যাশন হাউস নাইসম্যানের ব্যবস্থাপক ইমরান জানান, তাদের দোকানে ১৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২৭শ’ টাকা মূল্যের পাঞ্জাবি রয়েছে। নিজস্ব কারখানায় রিমি কটন, সিল্ক কটন, নেট কটন ও টিস্যু কটনের কাপড় দিয়ে এসব পাঞ্জাবি তৈরি হয়েছে।

সেইলরের যমুনা ফিউচার পার্কের আউটলেটের ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জানান, গত দুই বছর ধরে বাজারে রয়েছেন তারা। শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্টের পাশাপাশি দামি পাঞ্জাবি রয়েছে তাদের ৭টি শো-রুমে।

“ঈদের নতুন জামা হিসাবে পাঞ্জাবিও থাকে তরুণদের পছন্দের তালিকায়। সে কারণে এবার বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় নকশার পাঞ্জাবি এনেছে সেইলর। ক্রেতাদের বেশ সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে,” বলেন মাহফুজ।   

পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো বেচা বিক্রি নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেও তেমনটা জমে উঠেনি ঢাকা কলেজের উল্টো পাশের কয়েক দশকের পুরোনো পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে ঢাকার গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেটের পাঞ্জাবির বাজারে।

দেশীয় পাঞ্জাবির পাশাপাশি এসব মার্কেটে রয়েছে ভারতীয়সহ অন্য দেশের পাঞ্জাবির সমারোহ।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় খাদি পাঞ্জাবি বিতান, চান্দ সন্সসহ অন্যান্য দোকানগুলোতে বেশ ভিড় দেখা গেলেও দোকান মালিকরা জানালেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই দর কষাকষি করে চলে যাচ্ছেন।

তবে ঈদ আরও কাছাকাছি হলে বিক্রি বাড়বে বলে আশায় রয়েছেন এই এলাকার বিক্রেতারা।

চান্দ সন্সের বিক্রয়কর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে তৈরি পাঞ্জাবি ছাড়াও ভারতীয় পাঞ্জাবি পাওয়া যায় সায়েন্স ল্যাব এলাকার পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে। ৪৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার ৮৫০ টাকা মূল্যের পাঞ্জাবি রয়েছে।

পীর ইয়ামেনি মার্কেটের সজিব পাঞ্জাবি বিতানের কর্মী মো. গনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার তাদের মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা কম। ২০ রোজার পর অন্যান্য বছর বিক্রি বাড়ে।

এবারও ঈদ কাছাকাছি এলে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করেন সজিব।