‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহালে খুশি ব্যবসায়ীরা

সার্বিক বাজেটের আরও চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য সময় নিলেও ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহাল থাকায় সন্তোষ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2016, 04:19 PM
Updated : 2 June 2016, 07:49 PM

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আইনটি কার্যকরের সময় এক বছর পেছানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহাল থাকল, যেভাবে বছরে নির্দিষ্ট হারে একটি টাকা এনবিআরকে ভ্যাট হিসেবে দেন তারা।

নতুন ভ্যাট আইনে পণ্য বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার বিধান রয়েছে। ২০১২ সালে প্রণীত আইনটি আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা এর বিরোধিতা করে আসছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “এজন্য প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত যথাযথ নয়...আমরা আইনটি পুরোপুরি কার্যকর করব একটি বছর পরে।” 

অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।

“এটার জন্য আমরা খুশি। সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। শুধু অ্যামাউন্টটা ডাবল করে ফেলা হয়েছে। এটা আমরা সরকারকে বলব যে এত বেশি না বাড়িয়ে আরেকটু কম বাড়ানোর জন্য।”

এবিষয়টির স্থায়ী সুরাহার জন্য আরও আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব’ বলেও অভিহিত করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

সেইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা যেসব সুপারিশ করেছিলাম তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করছি।”

প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখায় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)।

ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ট্যাক্স এবং ভ্যাট সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতি পাঠানোর আগে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদের সভাপতিত্বে ডিসিসিআই বোর্ড রুমে সভা করেন সংগঠনটির নেতারা।

দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের পাশপাশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা সংস্কারের সুপারিশ করেছে ডিসিসিআই।

বিদ্যুৎ খাতে আমদানিনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছে, “২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৫.২% কম।

১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিরোধিতায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন। ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি।

“বিদ্যুৎ খাতে আমদানিনির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে হ্রাসকৃত মূল্যে সরবরাহ করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।”

রাজস্ব আদায়ে ভ্যাটকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে ডিসিসিআই বলেছে, “এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ে পরোক্ষ করের বোঝা সকল ভোক্তার উপর পড়বে।”

কর্পোরেট ট্যাক্স অপরিবর্তিত রাখাকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এতে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা যায়।

হতাশ বিজিএমইএ-রিহ্যাব

বাজেটে তৈরি পোশাক খাতের স্বার্থ রক্ষা হয়নি দাবি করে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজেট কেমন হয়েছে, এটা এখন বলতে পারব না। তবে আমাদের সেক্টর খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।

“আপনি ধার নিলেন ২০০ টাকা, ১০০ টাকা ফেরত দিয়ে বললেন, তোমার টাকা তো দিয়ে দিয়েছি। তাহলে এটা কী হল?”

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে দাবি উল্লেখ করে সিদ্দিকুর বলেন, “এত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও উৎসে কর কমানো হয়নি। এরকম হলে পোশাক খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।

“খুব কম সংখ্যক ব্যবসায়ী ৫ শতাংশ লাভ করে। হিসাব করে দেখা গেছে, রপ্তানিতে গড় মুনাফা ৩ শতাংশের নিচে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে অনেক সময় লাভ করতেও পারে না। তবুও তাকে উৎসে কর দিতে হবে। এমন হলে কীভাবে হবে?”

বাজেটে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর পক্ষ থেকে পেশ করা ১৩টি প্রস্তাবের কোনোটিই বিবেচিত হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

রিহ্যাবের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন শিল্প রক্ষার্থে রিহ্যাবের দাবির পক্ষে কোনো প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।

“আবাসন খাতে প্রস্তাবিত আয়করের পরিমাণ পরিবর্তনের ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের জন্য ব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ২ কোটি মানুষের আয়ের এ খাতটি আরও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।”

বাজেটে গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বলেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুবও।

“স্টিল-বিলেটের ডিউটি বেড়ে গেছে। বিলেটের দাম বাড়লে বাড়বে স্টিলের দাম, অন্যান্য গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দামও বাড়বে। বাজারে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।”

তিনি পোশাক শিল্প নিয়ে বলেন, “পোশাক শিল্প এমনিতেই খুব চাপে আছে। তাদের শ্রমমূল্য বেড়েছে, টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায় রপ্তানিতে লাভ কমেছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। তাদের দাবিগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন।”