ভ্যাটে পিছু হটল সরকার

নতুন অর্থবছর থেকেই পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর আদায়ের পরিকল্পনা এক বছর পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2016, 10:33 AM
Updated : 2 June 2016, 10:51 AM

আগামী ১ জুলাই থেকে ২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ কার্যকর করে ওই ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা করা হলেও তা এখন ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করে অর্থমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।

১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে আপত্তি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের হুমকি দেওয়ায় এবার বাজেট সংক্রান্ত আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এ বিষয়টি।  

মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মূল সংযোজন কর আইনটি অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ২০১২ সালে গৃহীত হয়। নতুন ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতি স্তরে মূল্য সংযোজন কর প্রযোজ্য করার স্বার্থে উৎপাদনকারী ও সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পর্যায়ের যথাযথ হিসাব রাখার ব্যবস্থাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“দুর্ভাগ্যবশত দেখা যাচ্ছে যে, এজন্য প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত যথাযথ নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২০১২ সালে প্রণীত মূল্য সংযোজন কর আইন ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও পুরাপুরি কার্যকর হবে না। এটি জুলাই ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে।  

মুহিত বলেন, “আমাদের লক্ষ্য কিন্তু বদলে যায়নি। আমরা আইনটি পুরোপুরি কার্যকর করব একটি বছর পরে।  

# ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ ২০১২ সালে করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

# এ আইনে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে বার্ষিক টার্নওভার বছরে ৩০ লাখ টাকার নিচে হলে ব্যবসায়ীকে ভ্যাট দিতে হবে না।

# ব্যবসায়ীরা বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে রাজি নন। তারা আগের মতো এলাকা ও ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এনবিআরের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট হারের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চালু রাখার পক্ষে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা।

# ১৫ শতাংশ ভ্যাট চালু না করার দাবিতে গত ৩০ মে এক ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। বাজেটে দাবি মানা না হলে ‘বড় ধরনের আন্দোলনের’ হুমকিও ছিল তাদের।

# কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশও (ক্যাব) ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিরোধিতা করে। তারা বলে, এতে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে; ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা বাড়বে।

# বর্তমানে আড়াই লাখ প্রতিষ্ঠানের মূসক নিবন্ধন থাকলেও মাত্র ৬৮ হাজার প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ভ্যাট দেয়।

নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। যার মধ্যে মূসক থেকেই ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা আসবে বলে মুহিত আশা করছেন। ভ্যাটের এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যার মধ্যে মূসক থেকেই ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ পাওয়ার আশা ছিল মুহিতের। 

১০ মাসের হিসাবে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

পাশাপাশি মোট বাজেটের আকার সংশোধন করে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।