চাঙ্গা রপ্তানি বাণিজ্যে ১০ মাসে ৯.২২% প্রবৃদ্ধি

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়লেও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2016, 12:20 PM
Updated : 5 May 2016, 06:02 PM

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি গতিশীল হওয়ায় চাঙ্গা হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য।

চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৭২ লাখ (২৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২২ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশ বেশি।

আর সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আয় বেড়েছে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ।

১০ মাসের এই রপ্তানি আয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ উন্নত দেশসমূহের অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। ফলে, আমাদের রপ্তানি খাত ক্রমশই চাঙ্গা হয়ে উঠছে।”

তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০ দশমিক ৮ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। ১০ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের মতো।

“অর্থবছর শেষে এই প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।”

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২ হাজার ৭৬৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার আয় করেছে।

এর মধ্যে ২ হাজার ২৬৩ কোটি (২২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন) ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।  অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে।

এই সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৭১১ কোটি (২৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন) ডলার।

গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই ১০ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় ছিল ২ হাজার ৫৩০ কোটি ৩২ লাখ (২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে জুলাই-এপ্রিল সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি আয় এসেছে।

এই এপ্রিল মাসে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। গত বছরের এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ২৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।

এপ্রিল মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২৬৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই মাসে দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট আয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে; এক হাজার ১৯০ কোটি (১১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন)  ডলার। আর এক হাজার ৭৪ কোটি (১০ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।

এই ১০ মাসে নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। উভেনে বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। উভেনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। নিটেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে খুবই কম শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তৈরি পোশাকের ভরা মৌসুম চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ সব দেশেই তৈরি পোশাকের চাহিদা। সে কারণেই রপ্তানি আয় বাড়ছে।

অর্থবছরের বাকি দুই মাসও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

‘দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়তা করছে’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয় অঞ্চলেই রপ্তানি বেড়েছে।

অন্য খাতের রপ্তানি আয়

তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য প্রায় সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

কৃষি পণ্যের মধ্যে চা রপ্তানি কমেছে ৩৯ শতাংশ। শাকসবজি ২৮ শতাংশ, তামাক ২৩ শতাংশ এবং ফল রপ্তানি ৫০ শতাংশ কমেছে। চামড়া রপ্তানি কমেছে ৩২ শতাংশের বেশি।

এছাড়া প্লাস্টিক রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ এবং বাই-সাইকেল ২৭ শতাংশ।

তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।

আলোচিত সময়ে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জাহাজ এবং এর অন্যান্য সরঞ্জাম রপ্তানি বেড়েছে ১০৬ শতাংশ।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। এবার তা ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

রিজার্ভ ২৮.৩৬ বিলিয়ন ডলার

এদিকে রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) বাড়ছে।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯২২ কোটি (২৯ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

বৃহস্পতিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ৯০ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে।

দু্ই মাস অন্তর আকুর দেনা শোধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে এক হাজার ২২৫ কোটি ১১ লাখ (১২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ কম।