‘স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার স্কিম’ বাংলালিংকে

এক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার পর বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে কোনো ছাঁটাই না করার ঘোষণা দিয়ে ‘স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার স্কিম’ চালুর কথা জানিয়েছে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2016, 03:41 PM
Updated : 14 Feb 2016, 07:25 PM

রোববার দিনভর উত্তেজনার পর সন্ধ্যায় গুলশানে নিজেদের প্রধান কার্যালয় ‘টাইগারস ডেন’-এ এক আকস্মিক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ।

বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়ার চাকরিচ্যুতির পর কর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে, রাতভর অবরুদ্ধ রাখে প্রধান টেকনিক্যাল কর্মকর্তা (সিটিও) পিরিহেনি এলহামিকে।

তার জের ধরে উত্তেজনা চলতে থাকলে রোববার বেলা ২টা ১০ মিনিটে প্রধান কার্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন শিহাব আহমাদ।

তিনি বলেন, বাংলালিংকে ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির ‘ওভারঅল রিস্ট্রাকচারিং’ নিয়ে কাজ চলছে। এ কাজের পরিপ্রেক্ষিতে ‘রিস্ট্রাকচারিং’ হবে, এজন্য ‘ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম’ ঘোষণা করা হচ্ছে।

“এটি পুরোপুরি স্বেচ্ছার একটি অফার। কোম্পানি পুনর্গঠনের আগে যারা মনে করছেন যুক্ত থাকতে চান না, তারা এ অফার নিতে পারেন।”

এই পরিকল্পনায় কতজন কর্মীকে অবসরে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এর কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। কোম্পানিকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে কী ধরনের রিস্ট্রাকচারিং করব, তার উপর নির্ভর করবে।

“তবে যেহেতু অনেকের মধ্যে এই প্রশ্নটা আসছে, তাই এই স্কিমটা সবাইকে অফার করা হয়েছে।”

কর্মী ছাঁটাইয়ের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিহাব বলেন, “ছাঁটাই বলতে যা বোঝায়, সে রকম কোনো সংখ্যা দিয়ে করার পরিকল্পনা নেই।

“ডিজিটাল টেকনোলজির প্রতিযোগিতার বাজারে ভালোভাবে কাজ করার জন্য কোম্পানি রিস্ট্রাকচার করা হবে। যেহেতু কোনো কোনো কর্মী এসব নিয়ে চিন্তিত, সেটা চিন্তা করেই স্কিম প্রস্তাব করা হয়েছে।”

গুলশানের টাইগারস ডেন

প্রচলিত আইনে যে সুবিধার কথা বলা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি সুবিধা এই স্কিমে রয়েছে বলে দাবি করেন শিহাব।

বাংলালিংকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে ‘স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ পরিকল্পনা (ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম)’র একটি ইমেইল পান তারা।

সেখানে বলা হয়, এর আওতায় এল ১৮ থেকে এল ২৭ এবং এল-ডিএস গ্রেডের স্থায়ী কর্মচারীরা ২৪ মাসের মূল বেতন নিয়ে যেতে পারবেন।

এল-১৪ থেকে এল-১৭ গ্রেডের কর্মীদের মধ্যে যারা গত ৩১ জানুয়ারি পর্য‌ন্ত কমপক্ষে দুই বছর ধরে স্থায়ী হিসেবে চাকরি করছেন, তারা চার মাসের মূল বেতন এবং দায়িত্ব পালনের প্রতি বছরের জন্য চার মাসের মূল বেতন ধরে সর্বোচ্চ ২৮ মাসের বেতন নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন।

এল-৩ থেকে এল-১৩ পর্যন্ত গ্রেডের কর্মীদের মধ্যে যারা গত ৩১ জানুয়ারি পর্য‌ন্ত কমপক্ষে দুই বছর ধরে স্থায়ী হয়েছেন, তারা চার মাসের মূল বেতনসহ প্রতি বছরের জন্য তিন মাসের মূল বেতন ধরে সর্বোচ্চ ৩০ মাসের বেতন নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন।

বাংলালিংকে কর্মচারী ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যে বৃহস্পতিবার ইউনিয়নের নেতা প্রকৌশলী শরিফুলকে চাকরিচ্যুত করা হলে কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কর্মীদের বিরোধ শুরু হয়।

কর্মীরা অভিযোগ করে আসছে, প্রস্তাবিত ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় শরিফুলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতের বিক্ষোভ

এই অভিযোগের বিষয়ে শিহাব বলেন, “পুরোপুরি আইন অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে ইউনিয়নের কোনো সম্পর্ক নেই।”

রোববার দুপুরে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক পাওয়ার অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার মো. মোস্তাককে কয়েকজন কর্মকর্তা ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তাকে নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব বলেন, “তা ঠিক নয়। কথাবার্তা জিজ্ঞাসা করার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

“সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরও কোম্পানির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু সম্ভবত পূর্ববর্তী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সহকর্মীরা ইমোশনাল হয়ে পড়েন এবং দল বেঁধে আসেন। তাদের বক্তব্য আমরা শুনেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে শিহাবের সঙ্গে বাংলালিংক হেড অব পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স নাফিজ আনোয়ার চৌধুরীও ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর প্রস্তাবিত ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জ্বল পাল সাংবাদিকদের বলেন, “চাকরিচ্যুত করার যে আতঙ্ক, তা থেকে রেহাই পেতে চায় সবাই। ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে এবং এই অপরাধে চাকরি যাওয়া চলবে না।”

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকে ২ হাজারের বেশি স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ভিমপেলকম লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে।