দেশীয় ব্যান্ডউইডথ কিনতে পারবে আইটিসি অপারেটররা

আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) অপারেটররা শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) থেকে সরাসরি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কেনার অনুমতি পেয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2016, 12:02 PM
Updated : 16 April 2017, 12:56 PM

বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমককে বলেন, সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কিছু শর্তসাপেক্ষে এ অনুমতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের ছয়টি আইটিসি অপারেটর প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে প্রতিবেশী ভারত থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে দেশে সরবরাহ করছিল।

এখন তারা যেমন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যান্ডইউডথ কিনে সরবরাহ করতে পারবে। একইভাবে প্রয়োজনে বিএসসিসিএলও তাদের কাছ থেকে ব্যান্ডইউডথ কিনতে পারবে।

বিএসসিসিএলের এমডি মনোয়ার বলেন, “আইটিসি অপারেটরা নিজেদের ব্যবহৃত ব্যান্ডইউথের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ব্যাকআপ হিসেবে বিটিআরসির অনুমতিসাপেক্ষে বিএসসিসিএল থেকে সরাসরি ব্যান্ডইউডথ ক্রয় করতে পারবে।

“এই ব্যান্ডইউডথ দেশেই ব্যবহার করতে হবে। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবে।”

প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য ব্যান্ডইউডথ কেনার অনুমোদন দেওয়া হবে জানিয়ে মনোয়ার বলেন, “কী দরে আইটিসি অপারেটরদের ব্যান্ডইউডথ বিক্রি করা হবে তা খুব শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে।”

তবে ব্যান্ডইউডথ বিক্রির সীমা নির্ধারণ করে দিলে এ সিদ্ধান্তে কোনো লাভ হবে না বলে দাবি করেছে আইটিসি অপারেটররা।

আইটিসি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের স্ট্রাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১০ শতাংশ ব্যান্ডইউডথ দেওয়ার সিদ্ধান্তে আইটিসি অপারেটরদের কোনো লাভ হবে না।

বর্তমানে ছয়টি আইটিসি কোম্পানি ১৬০ জিবিপিএসের (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) বেশি ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করছে। এই হিসাবে একক কোনো আইটিসি কোম্পানি দুই থেকে তিন জিবিপিএসের বেশি ব্যান্ডইউডথ বিএসসিসিএল থেকে কিনতে পারবে না।

সুমন বলেন, ব্যান্ডইউডথ কেনার এই সীমা উঠিয়ে দিলে বিএসসিসিএলের ব্যান্ডইউডথ বিক্রি হওয়ায় আয় বাড়বে এবং প্রায় ১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডইউডথ অব্যবহৃত পড়ে থাকবে না।

বিএসসিসিএল এর মধ্যে ভারতে ব্যান্ডউইডথ বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ১৯১ তম সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, আইটিসিগুলো আট ডলার করে (বর্তমানে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ কিনতে প্রতি এমবিপিএস সর্বনিম্ন দাম প্রায় ৮ ডলার) কিনে যেন ভারতের সেভেন সিস্টারের কাছে বেশি দামে ব্যান্ডইউডথ বিক্রি করতে না পরে সেজন্য এই সীমা ও রপ্তানিতে এই নিয়ম করা হয়েছে।

২০১২ সালের আগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযোগের জন্য একটি সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে আইটিসিগুলো তাদের অপারেশন শুরু করে।

আইটিসি অপারেটররা টেরেস্ট্রিয়াল অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে।

২০১২ সালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচএলজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড।

বর্তমানে বিএসসিসিএল তাদের ২০০ জিবিপিএস-এর মধ্যে মাত্র ৫০ জিবিপিএস বাংলাদেশের বাজারে সরবরাহ করতে পারছে।

বিটিসিএলের হিসাবে আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশে সব মিলে ৯০ জিবিপিএস চাহিদা হতে পারে, তখনও বিএসসিসিএলের ১১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ অব্যবহৃত থাকবে।

এর মধ্যে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ভারতে লিজে সরবরাহ করতে পরীক্ষামূলক সঞ্চালন চলছে। বাণিজ্যিকভাবে সঞ্চালন শুরু হলে বাংলাদেশ বছরে বৈদেশিক মুদ্রায় নয় কোটি ৪২ লাখ টাকা পাবে (এক দশমিক দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

বাংলাদেশ থেকে ৪০ জিবিপিএস পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ ভারতে রপ্তানি হতে পারে বলেও জানিয়েছে বিএসসিসিএল।

আগামী ডিসেম্বরে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-ইউ-৫ বা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হলে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ পাবে।