৭০০ কোটি টাকা লোপাটের খবর দিলেন গভর্নর

একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা সাতশ’ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন খোদ গভর্নর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2015, 04:03 PM
Updated : 20 Dec 2015, 05:58 PM

‘অজ্ঞাত কারণে’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ লোপাটকারীর পরিচয় প্রকাশ করছে না।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় অর্থ লোপাটের বিবরণ দেন।

গভর্নর তার লিখিত বক্তব্যে জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্ত পরিচালকদের অপসারণ করা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন ফৌজদারি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

সভা শেষে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হলেও কেউ প্রতিষ্ঠানটির নাম বলতে চাননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেশ গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। আমাদের (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের) তদন্তে সেটা ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

আগামীতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।”

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। গত নভেম্বরে তিনি এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ক্যাপ্টেন (অব.) এম মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি পিপলস লিজিংয়ের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার।

উজ্জ্বল কুমার নন্দী আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক হিসেবে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে এসেছেন।

আর বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড একটি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের নাম নেই। সাতজন পরিচালকের নাম রয়েছে।

এদের মধ্যে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে আছেন এ এন এম জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক হিসেবে আছেন তাজরীনা মান্নান, আরশাদ উল্লাহ, চ্যান জে হুং, জারোস্লাভ এম ভিস্কোভস্কি, আব্বাস উদ্দিন আহমেদ ও এম গোলাম সারোয়ার চৌধুরী।

এই প্রতিষ্ঠানের ৫১ ভাগ মালিকানা বিদেশি তিনটি কোম্পানির হাতে রয়েছে। আর বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের মালিকানাধীন পাইওনিয়ার ড্রেসেস লিমিটেডের হাতে রয়েছে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ার ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের।

গভর্নর তার বক্তৃতায় এ ঘটনাকে আর্থিক খাতের সুশাসনের জন্য ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন।

ওই সভায় গভর্নর বলেন, “একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান নিজ নামে এবং স্ত্রী, কন্যা, তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোনীত ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন। যার বর্তমান স্থিতি সাতশ কোটি টাকার বেশি।

“এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কিছু ঋণ হিসাবকে শ্রেণিকৃত ঋণ (সিএল) বিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত না করা, বিরূপ শ্রেণিকৃত ঋণকে অশ্রেণিকৃত হিসেবে দেখানো, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অনেক ঋণ হিসাবকে সিআইবিতে রিপোর্ট না করা, বিভিন্ন গ্রাহকের অগোচরে তাদের ঋণ হিসাবের বিপরীতে ছায়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পরিচালকরা অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনের মতো গুরুতর অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে।”

নিজের প্রভাব খাটানোর স্বার্থে ওই ব্যক্তি তার মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট লোকজনের সমন্বয়ে পর্ষদ গঠনের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান।  

সভায় লিজিং কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করে দিয়ে গভর্নর বলেন, “অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে আপনাদেরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”