‘ঘুষ লেনদেনে’ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

সিগারেট প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকারী যুক্তরাজ্যের কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) অবৈধ সুবিধা পেতে ঘুষ লেনদেনে জড়িত বলে বিবিসির এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2015, 07:07 PM
Updated : 1 Dec 2015, 07:08 PM

কোম্পানিটি পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে বলে বিবিসি প্যানোরোমায় উঠে এসেছে। কোম্পানির একজন কর্মী এ সংক্রান্ত কয়েকশ নথি ফাঁস করেছেন।

বিএটির হয়ে ১৩ বছর কেনিয়ায় কাজ করা পল হপকিন্স বলেছেন, আফ্রিকায় ব্যবসার করার জন্য এটা করতে হবে বলে নির্দেশনা আসার পর থেকে তিনি ঘুষ দিতে শুরু করেন।

“বিএটি লোকজনকে ঘুষ দিচ্ছে এবং আমি এতে সহযোগিতা করছি।”

“বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের যদি নিয়ম ভাঙতে হয় তাহলে তারা তা ভাঙবে।”

এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বিবিসিকে বলেছে, “সত্য হচ্ছে- আমরা দুর্নীতি সহ্য করি না এবং করব না, তা যেখানেই হোক না কেন।”

হপকিনসের ফাঁস করা ইমেইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) বর্তমান দুজন এবং সাবেক একজন সদস্যকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর অবৈধ অর্থ দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

তামাকজনিত অসুস্থতা থেকে মৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি প্রচারণা এফসিটিসি, যাতে বিশ্বের ১৮০টি দেশের সমর্থন রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুরুন্ডি থেকে এফসিটিসির প্রতিনিধি গদফ্রোয়া কামওয়েনুবুসা এবং কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রতিনিধি চাইবু বেদজা আবদু-দুজনকে তিন হাজার ডলার করে দেওয়া হয়েছে। আর রুয়ান্ডা থেকে সাবেক প্রতিনিধি বনাভেন্তুরে ইনজেইমানাকে ২০ হাজার ডলার দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য তারা তিনজনই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো থেকে ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভেরা দা কস্তা এ সিলভা বলেছেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো দায়িত্বজ্ঞানহীন।  

“মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুনাফা করতে তারা ঘুষকে ব্যবহার করছে।”

কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

তামাকবিরোধী আইন দুর্বল করতেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ঘুষ দিয়েছে বলে গোপন নথিতে দেখা গেছে।

বুরুন্ডির জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা কামওয়েনুবুসাকে ঘুষের বিনিময়ে দেশটির তামাক নিয়ন্ত্রণ বিলের খসড়ার অনুলিপি চাওয়া হয়েছিল এতে বেরিয়ে এসেছে।

বিএটির পক্ষে কাজ করা একজন কন্ট্রাক্টরের এক ইমেইলে বলা হয়, বিলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের আগে তাতে যে কোনো সংশোধনী আনতে সক্ষম হবেন কামওয়েনুবুসা।

যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, ঘুষ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ঘুষ লেনদেনের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানির বিচার হতে পারে।

কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ও বিপুল অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়তে পারে বলে বিবিসির প্রতিবেদেনে বলা হয়।

বিএটি বলছে, কোনো কর্মী ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে যে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

“আমরা গর্বিত যে, স্বচ্ছতা ও সততার যে প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে তা লংঘনের যে কোনো অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করা হয়।

“কোথাও নিয়ম লংঘনের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

“এখানে যারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তারা আমাদের একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন এবং আমাদের প্রতি প্রতিহিংসাবশত করা হয়েছে, যা আমাদের ব্যবসা নিয়ে মিথ্য ছবি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে।”

কোম্পানি ছাড়ার অল্প কিছুদিন আগে হপকিনস ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর একজন আইনজীবীর কথোপকথন রেকর্ড করেন, যাতে তথ্যদাতাদের অর্থ দেওয়া নিয়ে তাকে কথা বলতে শোনা যায়।

‘মুখ বন্ধ রাখতে’ কয়েকজনকে অর্থ দেওয়া প্রয়োজন বলে আইনজীবীকে বলতে শোনা যায় তাকে।

এ সময় আইনজীবী নওশাদ র‌্যামোলিকে বলতে শোনা যায়, “এটাই আমরা দিতে যাচ্ছি। হ্যাঁ, ঠিক আছে। আমাদের আর কাউকে অর্থ দেওয়া দরকার বলে তুমি মনে কর?”

এখন আর বিএটিতে না থাকা র‌্যামোলি বলেছেন, তিনি কখনও অবৈধ কর্মকাণ্ড বা ঘুষ লেনদেনে জড়িত ছিলেন না।