তাদের কেউ কেউ বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে দেখা স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করেছে।
গত ১৮ নভেম্বর প্রথমবারের মতো প্রায় দেড় ঘণ্টা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে বাংলাদেশ। পরে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরতে শুরু করলেও ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের কিছু ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ রাখা হয়।
আউট সোর্সিংয়ের কাজ করা ফ্রিল্যান্সার সাইদুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যারা ক্ষুদ্র পরিসরে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করি, আমরা সম্পূর্ণ শেষ। আমাদের পুরো কাজগুলোই আসতো ফেইসবুকের মাধ্যমে। ফেইসবুক বন্ধ থাকায় আমাদের পথে বসার মতো অবস্থা।”
“আমাদের যারা ক্লায়েন্ট আছেন তারা এখন ঝুঁকছেন ভারতের দিকে। এটা আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি করে দিয়েছে।”
সরকারের কাছে ফেইসবুক খুলে দেওয়ার দাবি জানান এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।
কী পরিমাণে ক্ষতি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মতো একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার কথা যদি বলেন ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার মাধ্যমে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আউট সোর্সিং করত, তাদের আয়ের পথ এখন একেবারেই বন্ধ।”
আউট সোর্সিং করে একজন শিক্ষার্থী সপ্তাহে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় আয় করতেন বলেও জানান সাইদুল।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ‘দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থেই’ ফেইসবুক, ফেইসবুক মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে।
তবে বন্ধ থাকলেও বিকল্প পথে অনেকেই ফেইসবুকসহ অন্যান্য অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে পারছেন বাংলাদেশে।
ফেইসবুকে পেইজ তৈরি করে টেইলারিংয়ের কাজ করতেন ঠাকুরগাঁওয়ের তারেক আলম। তিনি বলেন, “আমার এখানে বেশিরভাগ অর্ডার আসে ফেইসবুকে আমার পেইজে বিভিন্ন ডিজাইন দেখে। যেহেতু ফেইসবুক বন্ধ আমার অর্ডার আসাও বন্ধ।”
“এজন্য ফেইসবুকে ছোট একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে বন্ধু-বান্ধব, চেনা মানুষ, তাদের চেনা পরিচিতদের মাধ্যমেই মূলত এ কাজগুলো আসতো।”
একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন ফেইসবুক ভিত্তিক বুটিক প্রতিষ্ঠান ‘গুঁটিপোকা’র উদ্যোক্তা আফসানা সুমী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ফেইসবুক ব্যবহারকারীরাই এই বুটিক শপের ক্রেতা। তাই ফেইসবুক বন্ধ মানে ব্যবসা বন্ধ। প্রডাক্ট আছে, তা ক্রেতার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরিও আমরা। কিন্তু কোথায় তুলে ধরব?”
“স্বল্প পুঁজি নিয়ে শোরুম দেওয়া বা ওয়েবসাইট খোলা কোনোটাই সম্ভব নয়। তাই নিজের মেধাকে পুঁজি করে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলাম। সেটিও বন্ধ হয়ে আছে।”
ক্রেতাদের সাথে যে যোগাযোগ তৈরি হয়েছিলো তা ফিরে পাবেন কিনা- তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে এই উদ্যোক্তার।
ফেইসবুকে ‘কল্পতরু’ নামে একটি পেইজের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা চালাতেন আজিমপুরের আফসানা শর্মি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা এই উদ্যোক্তা বলেন, “শুধু যে আমার ক্ষতি হচ্ছে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আমাদের মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু কুরিয়ার সার্ভিসও গড়ে উঠেছে, যারা এই অনলাইন সাইটগুলোকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।”
“যে স্বপ্নটা দেখেছিলাম সেটা ভেস্তে যেতে শুরু করেছে। ফেইসবুক বন্ধ হওয়ায় বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেকের ক্ষতি হচ্ছে এটা আমরা জানি। এসব ক্ষয়ক্ষতি আমাদের ব্যথিত করে; কিন্তু এর জন্য অনেক মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ামাত্র ফেইসবুকসহ বন্ধ থাকা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী তারানা।