রবি-এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার আবেদন নিয়ে রুল

প্রতিযোগিতা কমিশনের মাধ্যমে বাজার মূল্যায়ন করে মোবাইল অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার আবেদনের নিষ্পত্তি কেন করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2015, 08:31 AM
Updated : 29 Nov 2015, 12:04 PM

নাজমুস সাকিব আল-আযম নামের এক এয়ারটেল গ্রাহকের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ফরিদ আহমদ শিবলীর বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাণিজ্য সচিব, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা (কমপিটিশিন) কমিশনের সচিব, টেলিকম সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এবং রবি ও এয়ারটেল কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আবেদনকারীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী উজ্জ্বল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম ও সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল এ আর এম হাসানুজ্জামান।

আদেশের পর ইউসুফ আলী বলেন, “দুই কোম্পানির একীভূত হওয়ার বিষয়টি সরকার অনুমোদন করলে বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের মার্কেট শেয়ারের ৯৬ শতাংশ চলে যাবে তিনটি কোম্পানির হাতে। এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবে, প্রতিযোগিতা না থাকলে গ্রাহকরাও বঞ্চিত হবেন।”

ব্যবসার সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির জন্য ২০১২ সালের জুনে সরকার প্রতিযোগিতা আইন করে, যাতে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। ওই কমিশনের জন্য সচিব নিয়োগ হলেও এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়নি সরকার। 

এ অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশনের মাধ্যমে বাজারের প্রভাব মূল্যায়নের ভিত্তিতে একীভূত করার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে ২৬ নভেম্বর রিট আবেদনটি করেন নাজমুস সাকিব, যার ওপর রোববার শুনানি নিয়ে রুল দিল আদালত।

ব্যবসা একীভূত করার অনুমতি চেয়ে গত সেপ্টেম্বরে বিটিআরসিতে চিঠি দেয় রবি ও এয়ারটেল।

ওই চিঠিতে বলা হয়, একীভূত হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ ও এনটিটি ডকোমার কাছে; বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে ভারতি এয়ারটেলের কাছে।

এতে বলা হয়, দুই অপারেটর একীভূত হওয়ার পর যৌথ গ্রাহকদের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে।

তবে তিন বছর পর থেকে ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না বলে বিটিআরসিতে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়।

ওই চিঠি পাওয়ার পর দুই কোম্পানির একীভূত হওয়ার প্রভাব বিশ্লেষণে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি।

একীভূত হওয়ার আর্থ-সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ, কোনো প্রকার বিরূপ প্রভাব থাকলে তা থেকে উত্তরণের পদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণ, একীভূত হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব, বিশেষ করে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি সঙ্কোচন বা সম্প্রসারণের সম্ভবনা এবং একীভূত কোম্পানিতে যোগদানে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বেচ্ছা অবসর স্কিমের (ভিআরএস) মতো বিষয় ওই সমীক্ষায় থাকবে বলে গত ২৩ নভেম্বর বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

রবির মালিকানা মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপের। অন্যদিকে এয়ারটেলের মালিক ভারতের ভারতি এয়ারটেল। তারা ওয়ারিদের ব্যবসা বাংলাদেশে কিনে নিয়েছিল।

এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্যাম্বোডিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুরেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।

দেশজুড়ে ৮ হাজার ১১৯টি সাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে রবি, যাদের গ্রাহক সংখ্যা অক্টোবরের হিসেবে ২ কোটি ৮২ লাখ।

বাংলাদেশে ভারতি এয়ারটেলের বিনিয়োগ শুরু হয় ২০১০ সালে। তখন ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল তারা। তিন বছর পর ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতী এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড।

বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে তারা আশাবাদী হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। ৯৯ লাখ গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে এয়ারটেল বাংলাদেশে চতুর্থ।

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন। অক্টোবর শেষে তাদের গ্রাহক ছিল ৫ কেটি ৫৮ লাখ। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ১৯ লাখ।

রবি ও এয়ারটেল একীভূত হলে নতুন কোম্পানির মোট গ্রাহক হবে ৩ কোটি ৮০ লাখের মতো।