কল রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে: তারানা

আন্তর্জাতিক কল রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিতে বিটিআরসি অনুমোদন দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2015, 04:48 PM
Updated : 4 Sept 2015, 03:25 PM

এই সিদ্ধান্তের ফলে অবৈধ ভিওআইপি বেড়ে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বৃহস্পতিবার সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আইজিডব্লিউ অপারেটরদের কলরেট দেড় সেন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য এক পাঁচ (০.০১৫) ডলার থেকে বাড়িয়ে দুই সেন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য দুই (০.০২) ডলার করার সিদ্ধান্তটি বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নিয়ে করা হয়।

“আমরা সংবাদ পেয়েছি, অনুমোদনটি বিটিআরসির, মন্ত্রণালয়ের না।”

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আত্মঘাতী’ এই সিদ্ধান্তের পর বৈধ আন্তর্জাতিক কল কমে যায়। ফলে কমে যায় সরকারের রাজস্ব।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৯ থেকে সাড়ে ৯ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল হয় বৈধভাবে। কিছুদিন আগেও এর পরিমাণ ছিল ১১ থেকে সাড়ে ১১ কোটি মিনিট।

সুনীল কান্তি বোস (ফাইল ছবি)

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির বিদায়ী চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চাপে পড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মেয়াদ আগামী অক্টোবরে শেষ হচ্ছে।

তারানা হালিম বলেন, কল রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি ‘একান্ত পরীক্ষামূলক’।

“যদি দেখা যায় পরীক্ষামূলকভাবে সিলিংয়ের মধ্যে চালু করার ফলে ভিওআইপি বৃদ্ধি পেয়েছে, তাহলে এটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

“এই সিলিংটি এক দশমিক পাঁচ থেকে তিন দশমিক চার পাঁচ পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যেই সীমিত থাকতে হবে।”

গত বছর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগে ‘ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট’ কমিয়ে আনার পাশাপাশি গেটওয়েগুলোর সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে বিটিআরসি।

তখন আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটের সর্বনিম্ন রেট শূন্য দশমিক শূন্য তিন (০.০৩) ডলার থেকে কমিয়ে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক শূন্য এক পাঁচ (০.০১৫) ডলার করা হয়েছিল।

এই কল থেকে যে রাজস্ব আয় হয় তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ২০ শতাংশ ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে প্রতিষ্ঠান (আইজিডব্লিউ), ১৭.৫ শতাংশ ইন্টারকানেকশন এক্সচেইঞ্জ প্রতিষ্ঠান (আইসিএক্স) এবং ২২.৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অপারেটর বা এক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (এএনএস) পেত।

সম্প্রতি কল রেট আবার বাড়ালেও রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন না আনায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এতে করে কল ভলিউম কী হয়েছে, তা জানতে আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামকে (আইওএফ) বিটিআরসির মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিদিনের তথ্য চাই।”

তারানা হালিম (ফাইল ছবি)

বৃহস্পতিবার সংসদে জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশীদ চৌধুরী পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে ভিওআইপি নিয়ে অভিযোগ করে ৩০০ বিধিতে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য চাইলে তারানা হালিম কথা বলেন। 

কাজী ফিরোজ বলেন, “দেশে অবৈধভাবে ভিওআইপির ব্যবসা করা হচ্ছে। এর পেছনে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা দিয়ে চারটা পদ্মা সেতু করা যেত। ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট ১৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।”

তারানা হালিম জাতীয় পার্টির নেতার কাছে অবৈধ ভিওআইপিতে জড়িতদের নাম চেয়ে বলেন, “ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত থাকলে নাম দেবেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেকের শাস্তি হবে, বরখাস্ত করা হবে।”

প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভিওআইপি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখানে আমি বা আমাদের কারো পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই।”

বৈধ আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়ার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেন তারানা হালিম।

এরপর বৃহস্পতিবারই সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনাকারীদের তথ্যের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পর্য‌ন্ত পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

গতবছর ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা 'কোটি টাকার' অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম।

চলতি বছর অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে ৯৫টি অভিযান পরিচালনা করে ১৬ হাজার ৩৮০টি সিম জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তারানা হালিম।

২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত হিসাব করলে ৫২ লাখ ১১ হাজার ৩১১টি সিম বন্ধ করা হয়।

তারানা হালিম জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব এবং জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে যেন তারা অভিযান চালিয়ে নিবন্ধনবিহীন সিম জব্দ করে।

“এই সব সিমই অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহৃত হয়।”

এছাড়া অবৈধ ভিওআইপি কাজে ব্যবহৃত সিম ও রিম চিহ্নিত করতে সিম বক্স ডিটেকশন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে বলেও প্রতিমন্ত্রী সংসদে জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যারা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করেন, তারা আত্মগোপনে চলে যেতে পারেন। সেজন্য, আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলবো না।”

কল রেকর্ডের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের জন্য বিটিআরসিতে সিবিআর টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে বলেও প্রতিমন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, সকল অপারেটরের মধ্যে কলের হিসাব পরীক্ষা করা হচ্ছে।

২৯টি আইজিডব্লিউ লাইসেন্সের মধ্যে চারটি বাতিল, দু’টি অকার্যকর এবং যাদের কাছে বকেয়া আছে, তা  আদায়ে মামলা করার কথাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

“যাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দায়ের করেছি, তারা আদালত থেকে স্টে অর্ডার নিয়েছে। আমরা স্টে অর্ডারগুলো ভ্যাকেট করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”