পুঁজিবাজারে কারসাজি: চিটাগাং সিমেন্টের মামলার শুনানি চলছে

বহুল আলোচিত ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার গ্রাইন্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ ও ৬ সেপ্টেম্বর হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2015, 07:06 PM
Updated : 1 Sept 2015, 07:06 PM

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার এ মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করেন।

মঙ্গলবার ’৯৬ এর শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে জেরা করেন এ মামলার আসামি রকিবুর রহমান এবং এ এস শহিদুল হক বুলবুলের আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।

এদিন জেরা সম্পন্ন না হওয়ায় আদালত ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে জেরা করা জন্য দিন ধার্য করেন। আর ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য জহিরুল হককে জেরা করার দিন নির্ধারণ করেন।

এ সময় মামলার আসামি রকিবুর রহমান এবং শহিদুল হক বুলবুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলার আসামিদের মধ্যে টিকে গ্রুপের আবু তৈয়বও রয়েছেন। অসুস্থ থাকায় তিনি আদালতে উপস্থিত হননি।

রকিবুর বাংলাদেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি। শহিদুল হক বুলবুল ডিএসইর পরিচালক ছিলেন।

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন আদালতে উপস্থিত থাকলেও তিনি সাক্ষীকে কোনো জেরা করেননি।

চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার গ্রাইন্ডিং কোম্পানি বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট লিমিটেড নামে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কাজ চালাচ্ছে।

মঙ্গলবার শুনানিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে আইনজীবী রেজাউল করিম ও মাসুদ রানা খান এবং মামলা বাদী বিএসইসির সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা এম এ রশীদ খান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট মামলার বাদী এম এ রশীদ খানকে জেরা করেছিলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। পরদিন অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে জেরা করা হয়।

ওই দিনই এ মামলার প্রথম জেরা ও জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা ১৯৯৬ সালে চিটাগাং সিমেন্টের পরিচালক থাকার সময় ভারতীয় ও ইরানি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার কিনবে তারা তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার মূল্য প্রভাবিত করেন। এ বিষয়ে পরবর্তীকালে চিটাগাং সিমেন্টের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রকিবুর এবং বুলবুল পরিচালকের দায়িত্ব না ছাড়ার কথাও মামলায় বলা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত চিটাগাং সিমেন্টের ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের মোট ১২ লাখ ৯০ হাজার শেয়ার ছিল। প্রতিটি শেয়ারের বুক ভ্যালু ছিল ১৩৪ টাকা। আসামি দুজন ওই সময়ে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালের ৩০ জুন এই কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ২ হাজার ৫৮৫ টাকা, যা ওই বছরের ৩১ জুলাই ছিল ৩ হাজার ৫২ টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ৩ হাজার ৭৪৭ টাকা, ৩১ অক্টোবর ছিল ৮ হাজার ৮৮২ টাকা। একই বছরের ১৬ নভেম্বর এই কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়ে উঠেছিল ১৫ হাজার ৬৯৪ টাকা।

শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড়ের পর আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তিন মাস পর ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত কমিটি সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ৪ মে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে মামলা করে বিএসইসি। মামলাটি পরবর্তীকালে বিচারের জন্য প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালত ঢাকায় বদলি করা হয়। এই আদালতে থাকাকালীন মামলাটির বাদীর সাক্ষ্য শেষ হয়। বিএসইসির ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মামলাটি এই আদালতে আসে।