পেঁয়াজ: পাইকারি দামের প্রভাব নেই খুচরায়

পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2015, 02:59 PM
Updated : 28 August 2015, 07:43 PM

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

গত দুই দিন ধরে এই একই দরে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারাও।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ত পপুলার বাণিজ্যালয়ের মালিক রতন সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

গত সপ্তাহে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে প্রতি টন ৭০০ ডলার নির্ধারণের পর দেশের পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়।

তবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা কমেছে বলে জানালেন রতন।

তিনি বলেন, “সব সময়েই মাসের শেষে এসে চাহিদা কমে যায়। আর এখন দাম বাড়ার কারণে চাহিদা আরও কমেছে। যে কারণে দামও কিছুটা পড়তির দিকে।”

শুক্রবার কারওয়ান বাজার, মহাখালী, ফকিরেরপুল, মুগদা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ (মোটা দানা) ৯০ টাকা আর ছোট দানার পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে তিন দিনে পেঁয়াজের দর এক তৃতীয়াংশের বেশি বেড়ে যাওয়ার পর এর বাজার ঠিক রাখতে টিসিবির মাধ্যমে আমদানিসহ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বাজারে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বন্দর থেকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত ছাড় করানোরও সিদ্ধান্ত হয়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের-টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারগুলোতে শুক্রবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দর ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা; দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

রতন সাহা বলেন, “বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করে। অন্য দেশ থেকে যেমন আমদানি হয় না বা অন্য দেশের পেঁয়াজ আমাদের বাজারে চলেও না। ভারতের পেঁয়াজ স্বাদে গন্ধে আমাদের দেশের পেঁয়াজের মতই।”      

পেঁয়াজের দামের লাগাম টেনে ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও বৃহস্পতিবার সার্কুলার জারি করে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়।

একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসি (ঋণপত্র) মার্জিন সবচেয়ে কম রাখারও অনুরোধ করেছে ব্যাংকগুলোকে।

এ বিষয়ে রতন সাহা বলেন, “এসব উদ্যোগের সুফল পেতে একটু সময় লাগবে। কারণ এখন যেসব এলসি খোলা হবে সেসব পেঁয়াজ বাজারে আসতে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে ভারতের বাজারের ওপর নির্ভর করবে দামের ওঠানামা।”

ট্যারিফ কমিশনের এক হিসেবে বলা হয়েছে, দেশে বছরে ২২ থেকে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন উৎপাদন হয়।

পেঁয়াজের পাশাপাশি বেড়েছে রসুনের দামও। শুক্রবার বাজারগুলোতে দেশি রসুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে।

আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহের এই পণ্যটির দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি।

এছাড়া কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

একই কারণে শাক-সবজির দামের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে বাজারে। অধিকাংশ সবজিই ৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, চিচিংগা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিংগা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, লালশাক প্রতি আটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, পুঁইশাক ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হয়েছে এসব পণ্য।