৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির রূপরেখা দেবে বিজিএমইএ

২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জিত হবে তার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে দেশের পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2015, 01:32 PM
Updated : 4 August 2015, 01:32 PM

৬ অগাস্ট চট্টগ্রামে অনুষ্ঠেয় বস্ত্র ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদর্শনীতে খসড়া রূপরেখাটি (রোডম্যাপ) সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি নাসিরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের খুলশীর বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

নাসিরউদ্দিন বলেন, গত বছর ঢাকা অ্যাপারেল সামিটে এ ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

“এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সামিটে সরকারি-বেসরকারি খাত, দাতা সংস্থা, ব্র্যান্ড এবং শ্রমিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে টেকসই পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু পরামর্শ আসে। পরবর্তীতে আমরা অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পরামর্শগুলো বিশ্লেষণ করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করি।”

ওই রোডম্যাপটিই রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ হোটেলে অনুষ্ঠেয় তিন দিনের বাংলাদেশে অ্যাপারেল অ্যান্ড সেফটি এক্সপোতে তুলে ধরা হবে, যার উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

রেডিসন ব্লু হোটেলের মেজবান হলরুমের প্রদর্শনীতে এবার স্টল থাকছে ৭৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক (১৭টি), ফায়ার ইকুপমেন্টস (২৫টি), মেশিনারি (১৮টি), সার্ভিস প্রোভাইডার্স (সাতটি), বিজিএমইএ (দুইটি), গার্মেন্ট এক্সেসরিজ (দুইটি), ফেব্রিক্স (একটি) ও গার্মেন্টস ফেব্রিক্সের (স্থানীয়, একটি) স্টল থাকছে।

প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তা, বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড, বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগকারী ও নীতি নির্ধারকরা অংশ নেবেন।

৬ অগাস্ট দুপুরে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ এবং বিকালে ‘ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্কিলস ফর স্ট্রং’ ও ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড ব্যালান্সড গ্রোথ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

৭ অগাস্ট সকালে ‘ফিন্যান্সিং অ্যাপারেল গ্রোথ’ এবং বিকালে ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব পোর্ট, কাস্টমস, পাওয়ার অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার টু রিচ ফিফটি বিলিয়ন ডলার ইন টুয়েন্টি টোয়েন্টিওয়ান’ শীর্ষক দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় জমি চায় বিজিএমইএ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী জানান, দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের ৯৫ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়।

এক সময় মোট পোশাক রপ্তানির ৪০ শতাংশই চট্টগ্রাম থেকে অর্জিত হত জানিয়ে তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতীয় পোশাক রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অবদান ১৫ শতাংশের নিচে চলে এসেছে।“

চট্টগ্রামে পোশাক শিল্পের ‘ধসের’ কারণ জানতে চাইলে নাসিরউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রামের ব্যবসাক্ষেত্র ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের যেসব কাজ করতে হয় তার সবই ঢাকা থেকে করতে হয়।”

চট্টগ্রামে সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকায় তিন হাজার কারখানা থাকলেও চট্টগ্রামে মাত্র সাতশ কারখানা রয়েছে।”

চট্টগ্রামে জমির দাম অনেক বেশি উল্লেখ করে নাসিরউদ্দিন গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন।

“অধিকাংশ কারখানা ঢাকায় স্থানান্তর হচ্ছে। এটা ভয়ংকর অশনি সঙ্কেত। ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ মানে শুধুই ঢাকা।”

শুধু বায়াররা (ক্রেতা) নয়, মন্ত্রীরাও চট্টগ্রামে আসতে চান না বলেও দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি।

পোশাক খাতের জন্য আলাদা শিল্পাঞ্চল স্থাপনের জন্য বারবার জমি চেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বলে খেদ প্রকাশ করেন নাছিরউদ্দিন।

তিনি বলেন, “১১ একর জমি দেওয়ার কথা দিয়েও সাবেক মেয়র মনজুর আলম দেননি। সরকারের কাছে আলাদা জোন করার জন্য জমি চেয়েছিলাম পাইনি।”

সরকার মিরসরাই ও আনোয়ারায় শিল্প জোন করার অনেক জমি দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আনোয়ারায় পাঁচশ একর, সীতাকুণ্ডে দুই থেকে তিনশ একর এবং পটিয়ায় কিছু জমি দিলে এ খাতের উন্নয়ন হবে।”

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হলে এ খাতে আশি লাখ থেকে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক্সপো কমিটির কো-অর্ডিনেটর ও বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক এএনএম সাইফুদ্দিন, পরিচালক মো. ওয়াহাব, সাব্বির মুস্তাফা, অঞ্জন শেখর দাশ, মো. মহিউদ্দিন ও নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।