মন্ত্রী হলেন বিএসসি, কামাল, ইয়াফেস; নতুন প্রতিমন্ত্রী তারানা, নুরুজ্জামান

শেখ হাসিনার সরকারে নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। বর্তমান দুই প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ইয়াফেস ওসমানও পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন।

সাজিদুল হকও শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2015, 10:26 AM
Updated : 14 July 2015, 10:34 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে শপথ নেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী এসময় উপস্থিত  ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত আয়োজনে দরবার হলে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

গত কয়েকদিন ধরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন চললেও কারা কারা শপথ নিচ্ছেন, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছিল না।

মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য রাখা চেয়ারে নাম দেখে পাঁচজনের নাম নিশ্চিত হওয়া যায়।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হয়।

নতুন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ইয়াফেস ওসমানের আগের দপ্তরই থাকছে।

নতুন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। নুরুজ্জামানকে করা হয়েছে খাদ্য প্রতিমন্ত্রী, যে দপ্তরে মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন কামরুল ইসলাম।

শপথ নিতে বিকাল ৪টার দিকে বঙ্গভবনে ঢোকেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার এক ঘণ্টা পর একে একে যান নুরুজ্জামান, তারানা হালিম ও ইয়াফেস ওসমান। সাড়ে ৫টার দিকে ঢোকেন আসাদুজ্জামান কামাল।

সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে বঙ্গভবনে ঢোকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান। ৬টায় শপথ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রায় ২০ মিনিটেরও বেশি পরে শুরু হয়।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন (বাঁ থেকে) তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদ

নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

৬টা ২৪ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে ঢোকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ৭ মিনিটের অনুষ্ঠান শেষে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া নুরুজ্জামান আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে পা ছুঁয়ে সালাম করেন। তারানা হালিমও প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করেন। এসময় শেখ হাসিনা তারানাকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

শপথ অনুষ্ঠান শেষে দরবার হলে ইফতার করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সবাই এক টেবিলে বসে ইফতার করেন।   

নুরুল ইসলাম বিএসসি

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বিএসসি সোমবারই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাকে টেলিফোন করে ‘তৈরি’ থাকতে বলেছেন।

সানোয়ারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম বিএসসি বেশ কিছু কাল ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধী শিবিরের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি নৌকা প্রতীকে বন্দর নগরীর একটি আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

দশম সংসদ নির্বাচনে ওই আসনটি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দিতে হয় তাকে।

নবম সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক।

মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি যে দায়িত্ব পাব, সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করব।”

তারানা হালিম

বিএসসির পাশাপাশি নারী আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিমও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টেলিফোন পাওয়ার কথা একদিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

দশম সংসদে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য তারানা হালিম সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার আত্মীয়।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৈশোরেই পরিচিতি পাওয়ার পর তারানা হালিম অভিনেত্রী হিসেবেও নাম কুড়ান।

তারানা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এনিয়ে দ্বিতীয়বার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে আমার শ্রম, মেধা, শিক্ষা সব কিছু দিয়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করবো।”

মন্ত্রিসভায় তার স্থান পাওয়াকে নারীর ক্ষমতায়নের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছেন তারানা।

“শিল্প আমার অন্তরের বিষয়, আর এটা বিশ্বাসের বিষয়। এমন কাজ করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী যে আমাকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেননি, এটা প্রমাণ করতে চাই।”

নুরুজ্জামান আহমেদ

লালমনিরহাট-২ আসন থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ এবারই প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার করিমপুরের কাশীরাম গ্রামের বাসিন্দা।

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।

নুরুজ্জামানের বাবা করিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ সালে এমএনএ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গত বছর শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং স্থপতি ইয়াফেস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। রদবদলে দুজনের উত্তরণ ঘটল।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ইয়াফেস ওসমান

ইয়াফেস ওসমান গত সাত বছর ধরে টেকনোক্র্যাট হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী না থাকার মধ্যে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তেজগাঁও আসনের সংসদ সদস্য কামাল।

গত বছর সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এটাই কার্যত প্রথম রদবদল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়।

ওই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি এ এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং নজরুল ইসলামকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এরপর গত দেড় বছরে আর কোনো পরিবর্তন আনেননি শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের জন্য তৈরি গাড়িগুলো সোমবার দুপুরে ছিল সচিবালয়ে

 

এর মধ্যে হজ নিয়ে বিতর্কিত এক মন্তব্যের কারণে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী গত বছরের ১২ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েন। ওই পদ এখনও শূন্য।

গত ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয় মন্ত্রিসভারই আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।

শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় ২৯ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী ছিলেন। নতুন তিনজনকে নিয়ে মন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে।