খালেদার বিচারে ট্রাইব্যুনাল হবে: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি জোটের আন্দোলনের সময় পেট্রোলবোমা হামলার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনার কথা সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2015, 07:02 AM
Updated : 8 July 2015, 05:56 PM

তিনি বলেছেন, “পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশকারী খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীসহ সকল অপরাধীদের নামে দায়েরকৃত মামলাগুলো বিচার করার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ভবিষ্যতে উক্ত আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।”

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সেলিনা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এ কথা জানান। অধিবেশন শুরুর পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করেন।

গত ২ জুন বরাতের রাতে কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “উক্ত ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এ আইনের অধীন অপরাধীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য দায়রা জজ বা দায়রা জজ কর্তৃক অতিরিক্ত দায়রা জজের নিকট স্থানান্তরিত হবার ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত দায়রা জজকে বিচারকার্য সম্পন্ন করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।”

শেখ হাসিনা সংসদকে জানান, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেত্রী খালেদা জিয়ার ‘হুকুমে’ চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে হরতাল-অবরোধে ‘পেট্রোল বোমা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে’ মোট ১৩৪ জনকে হত্যা করা হয়।

“বিএনপি জামায়াত জোটের ইস্যুবিহীন কথিত আন্দোলনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফলে ১ হাজার ৩৯৫টি যানবাহন, ১৩ দফায় ট্রেনে এবং ৬ দফা লঞ্চে নাশকতা চালানো হয়।”

জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও যানবাহনে আগুন দেওয়া বা পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। মাঝে মাঝে ডাকা ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তবায়িত’ হরতাল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করে আদালত।

ওই নির্দেশের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, হরতাল-অবরোধে নাশকতাকারীদের বিচারে সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে যাচ্ছে।

বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে প্রথম সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে আসার পর ওই অধ্যাদেশকে আইনের রূপ দেয়।

ওই সরকারের মেয়াদপূর্তির আগে ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনও করা হয়। তবে এর ২৬ ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে সন্ত্রাসী ও মদদদাতাদের বিচার করার উদ্যোগ এর আগে কখনো নেওয়া হয়নি।   

আইনে সন্ত্রাসী কাজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে যদি কেউ (ক) কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা ব্যক্তির কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে অথবা (খ) ‘ক’ এর উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য বস্তু, আগ্নেয়াস্ত্র বা অন্য কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে বা নিজে দখলে রাখে, ওই ব্যক্তি ‘সন্ত্রাসী কার্য’ সংঘটনের অপরাধ করছেন বলে গণ্য হবে।

এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডও দেওয়া যাবে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ ধরনের ঘটনায় উসকানিদাতার বিচারের বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে।

চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশের দায়ের হওয়া অসংখ্য মামলার মধ্যে অন্তত চারটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উসকানিদাতা হিসাবে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

সীমান্ত চুক্তি

ওয়াসিকা আয়শা খানের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সীমান্ত চুক্তির বিধানগুলো শিগগিরই বাস্তবায়ন করবে।

“সীমান্ত চুক্তির ফলে দুই দেশের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হবে। দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমারেখা সুনির্দিষ্ট হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সীমান্ত চুক্তির ফলে অপদখলীয় ভূমি সংক্রান্ত ও অচিহ্নিত সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।  এই চুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, প্রতিবেশীদের মধ্যকার সমস্যা যত জটিলই হোক না কেন, আলোচনার মাধ্যমে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব।”

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে সফরে সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকলগুলো তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে ছিট মহলবাসী বন্দিজীবন থেকে মুক্ত জীবনে ফেরত আসবে। অতঃপর রাষ্ট্র তাদের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।”

মো. আয়েন উদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টিতে মানবিক দিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। একে রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি যত দ্রুত সম্ভব সম্পাদনের আশ্বাস দিয়েছেন।”

নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধামন্ত্রী জানান, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও কলা-কুশলীদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠনের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ‘অনলাইন গণমাধ্যম সহায়ক নীতিমালা ২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।