কোকেন কাণ্ডের সমন্বিত তদন্তের নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরে আটক সূর্যমুখী তেলের চালানে তরল কোকেন পাওয়ার মামলা তদন্ত সরকারি পাঁচ সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে করার লিখিত আদেশ দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2015, 02:43 PM
Updated : 7 July 2015, 02:48 PM

চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ফরিদ আলম মঙ্গলবার আদেশ দিয়ে তার অনুলিপি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ, কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশকে পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন।

এর আগে গত রোববার আদালত সব সরকারি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে এবং আলামত সংগ্রহ করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এরপর সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে আলামত সংগ্রহ ও জব্দ তালিকা করতে গিয়েও তা পাননি বলে তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ করেন।

আলামত সংগ্রহ করতে না পারার পর সেদিনই আদালতের লিখিত নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।

অন্যদিকে রোববার আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে সোমবার চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য মহানগর হাকিম নুরুল আলমের আদালতে আবেদন করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসাইন আহমদ।

ওই আবেদনটি আদালত সোমবার নথিভুক্ত করে রাখে। মঙ্গলবার সকালে দুটি আবেদনের শুনানির পর বিকালে লিখিত আদেশ দেয় আদালত।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রশিকিউশন) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্দর, কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

“পুলিশের উপ-কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং অন্য সরকারি সংস্থার প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আইও মামলার আলামত সংগ্রহ করবেন।”

আদেশে আরও বলা হয়, এসব কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই জব্দ তালিকা প্রস্তুত হবে, তদন্ত কর্মকর্তার সামনে কর্মকর্তারা দস্তখত করবেন এবং আলামত আদালতে হাজির করতে হবে। এরপর আদালতের নির্দেশে পরীক্ষাগারে আলামত পাঠানো হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানিতে বলেছি, আমরা রাষ্ট্রপক্ষে সব সরকারি সংস্থা। আমাদের দ্বন্দ্বের কারণে যেন আসামি পক্ষ কোনো সুবিধা না পায়।

“আদেশে আদালত বলেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কারও কোনো কর্তৃত্ব গ্রহণযোগ্য হবে না। কেউ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে আসামি পক্ষ যদি তাতে সুবিধা পায়, তাহলে যার কারণে সুবিধা পাবে, তাকে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হতে পারে।”

আদালতের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসাইন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের লিখিত আদেশ হাতে পাওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।”

ফাইল ছবি

বলিভিয়া থেকে আসা ১০৭টি ড্রামের একটি কনটেইনারের একটি ড্রামে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে তরল কোকেনের মিশ্রণ ধরা পরার পর তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়।

ওই ড্রামের ১৮৫ কেজি সানফ্লাওয়ার তেলের এক-তৃতীয়াংশই তরল কোকেন বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান খান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদ, মোস্তফা কামাল নামের এক ব্যক্তি এবং আমাদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল।

এদের মধ্যে সোহেলকে পাঁচ দিনের এবং ঢাকায় গ্রেপ্তার অন্য তিন জনকে ১০ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মোস্তফা কামালের আত্মীয় বকুল এই ‘পাচারচক্রের’ হোতা, যিনি যুক্তরাজ্যে থাকেন। রাজু নামের এক ভারতীয় নাগরিকও এর সঙ্গে জড়িত।