জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ফের অবমাননার অভিযোগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়ে ‘কটূক্তি’ করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আবারও আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2015, 08:18 AM
Updated : 6 July 2015, 09:13 AM

কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী সোমবার ট্রাইব্যুনালে এই আবেদন করেন।

তাদের পক্ষে আবেদনটি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দাখিল করেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবেদনটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো শুনানি হয়নি।”

কামাল পাশা চৌধুরী জানান, এ আবেদনে তিনি ছাড়াও বাদী হিসেবে রয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর  ও নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য এফ এম শাহীন।

ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত।

শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

তবে জাফরুল্লাহর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত পরে ওই জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন। পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সে সময় তিনি বলেন, “আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।

“যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট,কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা,অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস,বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণ্ন করা।”

আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, “যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।”

ওই ঘটনা উল্লেখ করে কামাল পাশা বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিয়ে এ ধরনের কথা বলেন, তখন ট্রাইব্যুনালের কর্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটা আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না।

“আমরা মনে করছি, এটা ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তাই জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছি আমরা, যাতে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

এদিকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড ও জরিমানার বিরুদ্ধে চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসেনি বলে জাফরুল্লাহর আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।