দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে ‘এ সপ্তাহেই’ অভিযোগপত্র

নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ‘গণমাধ্যম শাখার প্রধান’ মোরশেদ আলম মাসুম ওরফে ট্রাক্টর ও তার সহযোগী আহমেদ ওয়াদুদ জুম্মন ওরফে সাইফুলের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ করে এনেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2015, 06:53 AM
Updated : 6 July 2015, 07:40 AM

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার তদন্ত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।  আশা করছি এই সপ্তাহেই আদালতে চার্জশিট দিতে পারব।”

গতবছর ৫ নভেম্বর কল্যাণপুরের একটি বাসা থেকে মোরশেদকে এবং তার ছয় দিন পের তার সহযোগী সাইফুলকে মোহাম্মদপুর থেকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়।

গ্রেপ্তার মোরশেদ ২০১১ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাস করার পর বাংলালিংকের মোবিসার্ভে অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেইনেন্স বিভাগে কাজ করতেন।

মোরশেদের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী থানার দক্ষিণচর মজলিশপুর গ্রাম। তার বাবা মো. খোরশেদ আলম দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে থাকেন। মা কামরুন্নাহার ও বোন জাকিয়া আলমকে নিয়ে কল্যাণপুরের রাজিয়া টাওয়ারে থাকতেন মোরশেদ।

সাইফুলও পেশায় প্রকৌশলী। ২০১২ সালে এমআইএসটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর ধানমণ্ডির লেক হেড গ্রামার স্কুলে শিক্ষকতা করার সময়ই তিনি মোরশেদের সংস্পর্শে আসেন বলে পুলিশের তথ্য।

তার বাড়ি কুমিল্লার বরুড়ায়। ঢাকার ঠিকানা মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সূরী রোড। বাবা আবদুল মান্নান সরকার, মা মাকসুদা আহমেদ। তার দুই বোন শামস মাসরিকি মান্নান এবং সিরাজুন মনিরা মান্নান পেশায় চিকিৎসক।

পুলিশ বলছে, মোরশেদ আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের প্রচার শাখার দায়িত্বে ছিলেন। সরকার উৎখাতের পরিকল্পনায় ইন্টারনেটে প্রচারণার পাশাপাশি নিজেদের মতাদর্শ প্রচার করে সংগঠনের সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।

গ্রেপ্তারের সময় দুজনের কাছেই ল্যাপটপ, মডেম এবং বিভিন্ন ধরনের ‘জিহাদি বই’ পাওয়া যায়।

ফেইসবুকে মোরশেদের ১১৭টি অ্যাকাউন্ট ছিল, যেগুলো তিনি একাই ব্যবহার করতেন। এছাড়া ‘বালাকোট মিডিয়া’, ‘তিতুমীর মিডিয়া’, ‘আনসারউল্লাহ বাংলা মিডিয়া’, ‘আল কাদিসিয়া মিডিয়া’ নামে ফেইসবুক গ্রুপ খুলে তারা প্রচার চালাচ্ছিলেন বলে তদন্তকারীদের তথ্য।

তারা বলছেন, মোরশেদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ভাষার ‘জঙ্গি বক্তব্য’ সাইফুল বাংলায় অনুবাদ করতেন। তারপর সেগুলো মোরশেদ তার ফেইসবক অ্যাকাউন্টগুলোয় পোস্ট করতেন। সাইফুল আল কায়দার সাময়িকী ‘ইন্সপায়ার’ এর পঞ্চম খণ্ডও বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।

গ্রেপ্তারের পর মোরশেদ কয়েকদফা পুলিশের রিমান্ডে থাকার পর আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা নিবারণ জানান।

তিনি বলেন, সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা বললেও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি।

জবানবন্দিতে মোরশেদ বলেছেন, ২০১০ সালে ওমর নামে পাকিস্তানি এক নাগরিকের সঙ্গে ফেইসবুকে পরিচয় সূত্রে তিনি পাকিস্তানভিত্তিক ফোরাম ‘বাবউল ইসলাম’র সঙ্গে পরিচিত হন। তাদের সঙ্গে ফেইসবুকে নিয়মিত তার যোগাযোগ হত।

ওমরই ২০১১ সালে ‘আনসারউল্লাহ বাংলা মিডিয়ার’ বাংলা বিভাগের অনুবাদকের কাজ দিয়েছিলেন বলে মোরশেদের দাবি।

বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে সংগঠনের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন মোরশেদ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনো আটক করলে যাতে তার কম্পিউটার থেকে তথ্য না পায়, সেসব প্রযুক্তিও ব্যবহার করতেন তিনি। এসব কারণে সংগঠনে তাকে ‘ট্রাক্টর’ বলে ডাকা হত। 

নিবারণ বলেন, অনলাইনে জঙ্গি মতাদর্শ প্রচার করে কর্মী সংগ্রহই ছিল মোরশেদের প্রধান কাজ। ধনী পরিবারের সন্তান বলে তাকে কেউ অর্থ সহায়তা কখনো করেনি। তবে তিনি নিজে বিভিন্ন সময়ে নিজের মতাদর্শে বিশ্বাসীদের অর্থ সহায়তা করতে চেয়েছেন।

“সরকারের প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্য ছিল বলেও জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মোরশেদ। ফেইসবুকে বা অনলাইনে কারা ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে সে বিষয়েও তারা খেয়াল রাখতেন।”