মন্তব্যে সংযত থাকার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগ সম্পর্কে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সবাইকে সংযত ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। 

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2015, 05:33 PM
Updated : 5 July 2015, 05:33 PM

বিচার বিভাগ নিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের এক দিনের মধ্যে রোববার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে আপিল বিভাগে এক শুনানিতে বিএনপি নেতার আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।

উপলক্ষ পেলে বিচার বিভাগের সমালোচনাও করা যায়- শনিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, বিচারকরা এখন আগের চেয়েও নিয়ন্ত্রিত।

পরদিনই শুনানিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য নিয়ে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশ পায়।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে এই ধরনের অযাচিত আচরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারির প্রকাশ ঘটেছে বলেও মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানি শেষে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যেটা বলতে চেয়েছেন, বিচার বিভাগ সম্পর্কে যদি অযাচিত মানহানিকর নানা বক্তব্য দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না।”

মাহবুবে আলম বলেন, “প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে, সবার প্রতি সমান আচরণ করে যাচ্ছেন। তারপরও কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিচার বিভাগ নিয়ে যে সমস্ত বিরূপ মন্তব্য করেন, এগুলো খুবই দুঃখজনক।

“প্রধান বিচারপতি আদালতের পক্ষ থেকে খুব উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।”

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে কোনো আদালত সমন্ধে কিংবা যে কোনো বিচারক সম্পর্কে কোনো অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

ফখরুলের পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত থাকা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “বিচার বিভাগ সম্বন্ধে মাননীয় প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন না, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রিত’-এ ধরনের মন্তব্য করার সময় আপনাদের সতর্ক মতামত দেওয়া উচিত।

“আমি বললাম, কাগজে কলমে ও সংবিধানে নিম্ন আদালত স্বাধীন থাকলেও প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন না। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।”

প্রধান বিচারপতি অভিযোগ কেন্দ্র খোলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমরা বলেছি, আপনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। আপনার বিভিন্ন বক্তব্য দেখে আমরা আশাবাদী।”

গণতন্ত্র রক্ষায় বিচার বিভাগের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করা হয়নি বলে অতীতে অনেক ঘটনায় বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

“এরপর উনি আমাকে বললেন, আপনি যদি এ কথা বলেন আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব। আমি বলছি, আবার বলছি- অধস্তন আদালত কাগজে কলমে স্বাধীন।”

শনিবার এই কর্মশালায় বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, উপলক্ষ পেলে বিচার বিভাগের সমালোচনাও করা যায় (ফাইল ছবি)

কারবন্দি ফখরুলের স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকের প্রতিবেদন দাখিল করার পর শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্য আসে।

আদালত মির্জা ফখরুলের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ৮ জুলাই প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।

এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ আগামী ৮ জুলাই আদেশ দেবে।

নাশকতার অভিযোগে পল্টন থানায় করা তিন মামলায় ফখরুলকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ৫ ‍জুলাই আদেশের দিন ধার্য রেখেছিল।

এদিন একজন চিকিৎসকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন খন্দকার মাহবুব।

এর বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদেশ পর্যায়ে এভাবে একজন চিকিৎসকের কোনো সার্টিফিকেট দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রয়োজন হলে আদালত একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে প্রতিবেদন চাইতে পারেন।

শুনানির পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “হঠাৎ করে একজন প্রফেসর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন। এটা আমলে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বঙ্গবন্ধু মেডিকেলকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনজন অধ্যাপকের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠনের জন্য। এ বোর্ড যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটার ওপর আদালত জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন।”

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা বলেছি তার ব্রেন সার্জারি হওয়া দরকার। তার হার্টে চারটি রিং পরানো আছে। তার ব্রেনে রক্ত চলাচলে সমস্যা হচ্ছে, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এগুলোর সারাংশ একজন প্রফেসরের রিপোর্ট আদালতে দিয়েছি।

“তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বললেন, এ রিপোর্ট তো কল (চাওয়া) করা হয়নি। এ রিপোর্ট এল কেন? এই আপত্তির পর আদালত একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। তারা ৮ জুলাই রিপোর্ট দেবে।”

চিকিৎসার প্রয়োজনে মির্জা ফখরুলের জামিন বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।