তারা বলছেন, সিরিয়ায় যাওয়ার পর যোগাযোগ হলেও আব্দুল মান্নানদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাদের।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান অনেক বছর পর পরিবারের ১১ সদস্যকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন।
গত ১১ মে ফিরে গেলেও মাঝপথে তুরস্ক থেকে উধাও হয়ে যাওয়া পরিবারটিকে নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছিল। এর মধ্যে শনিবার পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পরিবারটি আইএসের সঙ্গে রয়েছে।
রোববার মাইজগাঁওয়ে গিয়ে মান্নানের ভাই আব্দুল লতিফের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্বশেষ গত ২১ মে ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল।
তারা কোথায় আছেন, তা না জানালেও ‘ভালো আছেন’ এবং তাদের জন্য চিন্তা না করতে বলেছেন বাংলাদেশে থাকা তাদের স্বজনদের।
আইএসের মাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতেও পরিবারটি নিজেরা নিরাপদে রয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে ওই বিবৃতিটির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে বিবিসি জানায়।
স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে ১১ এপ্রিল বাংলাদেশে এসে এক মাস গ্রামে ছিলেন মান্নান। তবে তাদের আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি স্বজনদের।
তবে মান্নানের মেয়ে রাজিয়া খানমের (২১) আচরণে ভিন্নতা দেখতে পেয়েছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান মান্নানের ভাই প্রয়াত এখলাছ মিয়ার ছেলে নাজমুল হক।
তিনি বলেন, “রাজিয়া গরমের মধ্যেও যেভাবে সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখত এবং সবাইকে পুরো পর্দা করতে বলত, তা কিছুটা অস্বস্তিকর মনে হত। রাজিয়ার প্ররোচনায় তারা আইএসে যোগ দিতে পারেন।”
সম্পর্কে মান্নানের নাতি তারেক খান বলেন, “যুক্তরাজ্যে আমাদের আত্মীয়দের কাছেও শুনেছি, রাজিয়া একটি ইসলামী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। সে ওই সংগঠনের লুটন শাখার দায়িত্বে ছিল।”
বেডফোর্ডশায়ারের লুটনে মান্নানের প্রতিবেশীদেরও সন্দেহ, এই পরিবারের কয়েকজন নারী উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে গ্রেপ্তার এড়াতে তারাই পুরো পরিবারটি নিয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন।
ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নামা আইএসে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য থেকে অন্তত ৪২ জন ইতোপূর্বে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন, এর মধ্যে লুটনের একজন রয়েছেন। আইএস সংশ্লিষ্টতার জন্য লুটনের আরেক নারীকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো পরিবারের আইএসে যোগ দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ৭৫ বছর বয়সী মান্নানের পরিবারের অন্য সদস্যরা হলেন- স্ত্রী মিনারা খাতুন (৫৩), মেয়ে রাজিয়া খানম (২১), ছেলে মোহাম্মদ জায়েদ হুসাইন (২৫), মোহাম্মদ তৌফিক হুসাইন (১৯), মেয়ে সাঈদা খানম (২৭), তার স্বামী মোহাম্মদ আবিল কাশেম সাকের (৩১), ছেলে মোহাম্মদ সালেহ হুসাইন (২৬), তার স্ত্রী রওশনারা বেগম (২৪) এবং তিন শিশু, যাদের বয়স এক থেকে ১১ বছর।
মান্নান সপরিবারে বাংলাদেশ ছাড়ার ১০ দিন পর যোগাযোগ করলেও তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু না জানাতে বলেছেন বলে তার ভাই লতিফ জানান।
আইএসের নামে বিবৃতি আসার পর লতিফকে উদ্ধৃত করে একটি গণমাধ্যমে বলা হয়, ওই বিবৃতি প্রকাশে মান্নানকে বাধ্য করা হয়েছে।
তবে লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ধরনের কোনো কথা তিনি বলেননি।
ভাইয়ের বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাননি তিনি। “পুলিশ বেশি কথা বলতে মানা করেছে,” কারণ দেখান তিনি।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ পরিবার সম্পর্কে আমাদের পূর্ব ধারণা নেই। তবে এ ঘটনা জানার পর তাদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
যোগাযোগ হলেও পরিবারের ১২ সদস্যকে ‘হারিয়েছেন’ বলে বারবার কাঁদছিলেন লতিফ।
মাইজগাঁওয়ে মান্নানের চার ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই এখন থাকেন, অন্যজন হলেন আব্দুল ওয়াহিদ। এখলাছ মিয়া মারা গেছেন। অন্য ভাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
মান্নান ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। সেখানে তিনি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।
ডায়াবেটিসের রোগী মান্নানের স্ত্রী মিনারা ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।
মান্নানের আগের স্ত্রীর দুই ছেলে লুটনে থাকেন। বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নিখোঁজ হওয়ার খবর তারাই পুলিশকে প্রথম জানিয়েছিল।