সাকার আপিল: আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল শুনানিতে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2015, 12:25 PM
Updated : 5 July 2015, 01:17 PM

রোববার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্ব চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ একাদশ দিনের মতো আপিলের শুনানি নেয়।

এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আবেদন জানিয়ে ১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন আপাতত শেষ হলে আদালত রোববার শুনানির দিন রাখেন।

রোববারের শুনানিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন আসামিপক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তার সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন ও মহিনুর রহমান।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।

দ্বিতীয় অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকালে সাড়ে ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাউজানের মধ্যগহিরা হিন্দুপাড়া গ্রামটি ঘিরে ফেলে। পরে ডা. মাখনলাল শর্মার বাড়ির আঙিনায় নিরস্ত্র হিন্দুদের একত্রিত করে সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতে তাদের উপর নির্বিচারে গুলি করা হয়।

এতে পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, জ্যোতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনার তিন-চারদিন পর মারা যান ডা. মাখনলাল শর্মা । জয়ন্ত কুমার শর্মা গুরুতর আহত হয়ে পরে প্রতিবন্ধী হয়ে যান।

তৃতীয় অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড হয়। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাউজানের গহিরা এলাকায় কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়।

সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতে প্রার্থনারত অবস্থা থেকে নূতন চন্দ্রকে টেনে বাইরে নিয়ে আসা হয়। সালাউদ্দিন কাদেরের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনারা নূতন চন্দ্রের ওপর গুলি চালানোর পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও গুলি করেন।

দেড় বছর আগে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ জুন থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের শুনানি শুরু হয়। এটি আপিল আদালতে আসা যুদ্ধাপরাধের পঞ্চম মামলা।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে শুনানিতে আসামিপক্ষ পেপারবুক থেকে এসব অভিযোগ ও এর পক্ষে প্রসিকিউশনের সাক্ষীর জেরা-জবানবন্দি, আসামিপক্ষের সাক্ষী ও ট্রাইব্যুনালের রায় তুলে ধরে। ৩০ জুন থেকে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে, যা ১ জুলাই পর্যন্ত চলে।

রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

এছাড়া হত্যা, গণহত্যার পরিকল্পনায় সহযোগিতা এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো তিনটি অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপহরণ ও নির্যাতনের দুটি ঘটনায় তাকে দেওয়া হয় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড।

রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ এনেছে, তার মধ্যে নয়টি (২ থেকে ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। আর প্রসিকিউশন শুনানির সময় কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগের মূল্যায়ন করেনি ট্রাইব্যুনাল।

সব দণ্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের।