ওই গম ‘খাওয়ার উপযোগী’: আদালতকে খাদ্য অধিদপ্তর

ব্রাজিল থেকে চারশ কোটি টাকায় আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2015, 08:48 AM
Updated : 5 July 2015, 12:49 PM

এ বিষয়ে শুনানির জন্য রিট আবেদকারী পক্ষ সময় চাওয়ায় আদালত ৮ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছে।

রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এই দিন ঠিক করে দেয়।

আগের নির্দেশনা অনুযায়ী গম নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের প্রতিবেদন এদিন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার প্রতিবেদনে বলেছেন- গম খাওয়ার উপযোগী। অথচ অন্যান্য প্রতিবেদনে দেখা যায়, গমে পোকা আছে এবং সাব স্ট্যাণ্ডার্ড।

“প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে- অধিদপ্তরের বক্তব্য সঠিক নয়। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সময় চাওয়া হলে আদালত ৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।”

ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, গম নিয়ে চার সংস্থার করা পরীক্ষার প্রতিবেদন যুক্ত করে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওই প্রতিবেদন দিয়েছেন। এর সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় অধিদপ্তরের নিজস্ব পরীক্ষার প্রতিবেদনও রয়েছে। এতে দেখা যায় ওই গম খাওয়ার উপযোগী।

বাংলাদেশ শিল্প বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে মহাপরিচালকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি করা গমের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদাম মজুদ ওই গমের ৫৭টি নমুনা নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।

“ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম চুক্তিপত্রের নির্দেশ অনুসারে গ্রহণীয় সীমার মধ্যে থাকায় মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত বলে খাদ্য অধিদপ্তর হতে প্রত্যয়ণ করা হল।” 

মহাপরিচালক আদালতকে জানিয়েছেন, ব্রাজিল থেকে আনা গমের নমুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা করে প্রোটিনের যে মাত্রা পাওয়া গেছে, তা চুক্তিপত্রের চাহিদার চেয়ে বেশি। 

আমদানি করা দুই লাখ পাঁচ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন গমের মধ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

সম্প্রতি একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ আপত্তিও তুলেছে।

পুলিশের আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে ‘লুকোচুরি’ শুরু করে বলে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

‘পচা গম’ আমদানির অভিযোগ ওঠার পর বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়।

তবে ওই গম ‘পচা নয়’ দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে বলেছেন, “এ গম সম্পূর্ণ খাবার উপযোগী। খাদ্য অধিদপ্তর ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গমের মান নিয়ে আমি স্যাটিসফায়েড।”

এরপর ‘নিম্নমানের’ গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী গত ২৮ জুন এই রিট আবেদন করেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না, সে বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী, খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের পাঠানো প্রতিবদন আদালতে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। দুপক্ষের শুনানির পর আদালত ৮ জুলাই আদেশের দিন রাখে।