ভর্তি জটিলতাকে ‘উন্নয়নের বেদনা’ বললেন শিক্ষামন্ত্রী

কলেজে ভর্তিতে জটিলতা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একে বললেন ‘উন্নয়নের বেদনা’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2015, 05:53 AM
Updated : 5 July 2015, 09:40 AM

রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, একাদশে ভর্তিচ্ছু সব শিক্ষার্থী আগামী ২১ দিন বিলম্ব ফি ছাড়া একাদশে ভর্তি হতে পারবেন।

মন্ত্রীর ভাষায়, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া একটি ‘ব্যাপক’ কর্মযজ্ঞ। এ কাজে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার কারণ হিসাবে নাহিদ ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা ও সীমাবন্ধতার’ কথা বলেছেন।

“আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সীমাবদ্ধ। শিক্ষা বোর্ডগুলোরও বড় ব্যবস্থা নেই। কম ঢাল তলোয়ার নিয়ে বড় যুদ্ধে নেমিছি।... আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, ক্ষমাসুন্দরভাবে বিষয়টি দেখবেন।”

নাহিদ বলেন, “বড় কাজ করতে গেলে ছোট ভুল হতেই পারে। তবে এটা হোক আমরা তা চাই না। এটা উন্নয়নের সমস্যা, উন্নয়নের বেদনা।”

এবারের মত সমস্যা ‘ভবিষ্যতে আর থাকবে না’ বলেও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেন শিক্ষামন্ত্রী।

“নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, কেউ (ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী) ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এটা ঠিক ভর্তি বিলম্বিত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ হয়েছে।”

গত কয়েক বছরের মত এবারও একাদশে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাওয়া জিপিএ’র ভিত্তিতে। এবার এই কর্যক্রম চলে অনলাইনে, শিক্ষার্থীদের ফি জমা দিতে হয়েছে এসএমএসের মাধ্যমে।

কারিগরি জটিলতা দেখা দেওয়ার নির্ধারিত সময়ের তিন দিন পর ২৮ জুন মধ্যরাতে ভর্তির জন্য প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় হাজারো ভুলের কারণেও শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০০ বা তার বেশি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, এমন কলেজে এবার অনলাইন বা এসএমএসে ভর্তির জন্য প্রথমে একবার নীতিমালা জারি করা হলেও পরে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান কাউকে না জানিয়ে নিজ উদ্যোগে সব কলেজের ক্ষেত্রে ওই নির্দেশনা জারি করেন।   

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কৌশলী উত্তর দেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।

তিনি বলেন, “বড় কাজ করতে গেলে কিছু বাধা ও সীমাবদ্ধতা থাকবেই। যার ফলে এর মধ্যে আর কোনো ফাঁক খোঁজার কোনো কারণ নেই। ভর্তি প্রক্রিয়াকে সহজ করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই অনলাইন ভর্তি পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে।”

কারিগরি জটিলতায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সবগুলো স্বীকার করলেও নতুন পদ্ধতি নিয়ে সন্তোষ খোঁজারও চেষ্টা করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আগে ভর্তি বাণিজ্যসহ যেসব অভিযোগ উঠত, এবার সেগুলো উঠেনি।”

প্রথমধাপের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষের পর আরও তিনধাপে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম চলবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি জানান, ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২২৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে রোববার দুপুর পর্যন্ত নয় লাখ ২৩ হাজার ১০৫ জন বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছেন।

যেসব শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজ পায়নি বা আবেদন করেও কোনো কলেজ পায়নি, তারা ৬ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। ৭-৮ জুলাই তাদের ভর্তি হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় মেধাতালিকায় জায়গা পেয়েও যারা ভর্তি হয়নি, তাদের তৃতীয় দফায় বিভিন্ন কলেজের শূন্য আসনে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে ৯ ও ১০ জুলাই। ১১ জুলাই তালিকা প্রকাশ করে ১২ জুলাই তাদের ভর্তি করা হবে।

যেসব শিক্ষার্থী এবার আবেদনই করেনি এবং সুযোগ পেয়েও ভর্তি হয়নি, তারা চতুর্থ দফায় ১৩ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। ২৩ জুলাই তাদের মেধাতালিকা প্রকাশ করে ২৫ ও ২৬ জুলাই ভর্তি করা হবে বলে জানান নাহিদ।

“আশা করি এর মধ্য দিয়ে সংকট থেকে ছেলেমেয়েরা মুক্ত হয়ে আসবে।”

মাধ্যমিক উত্তীর্ণ যেসব শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে, তারা আবেদন করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান জানান।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।