রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদবাজার

রোজার মাঝামাঝিতে এসে রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদবাজার। তবে মার্কেটগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা গেলেও বিক্রিতে এখনও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বিক্রেতারা।

ফয়সাল আতিকশহীদুল ইসলাম, সুলাইমান নিলয় ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2015, 04:53 PM
Updated : 3 July 2015, 05:25 PM

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার নিউ মার্কেট, চাঁদনি চক, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

নিউ মার্কেট, সায়েন্সল্যাব এলাকার শপিংমলগুলোতে ব্যাপক ভিড় চোখে পড়লেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা বলেছেন।

ঢাকার ব্যস্ততম এই এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকেই থ্রি-পিস, জামা, জুতা, পাঞ্জাবিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গ্লোব সুপার মার্কেটের কাপড়ের ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, “লোকজন শপিং মলে ভিড় করলেও দাম একটু কম পেয়ে ফুটপাত থেকেই পছন্দের জিনিস বেশি কিনছেন।”

অফিস ছুটি থাকায় নিউ মার্কেট থেকে পাঞ্জাবি, স্লিপার, টি-শার্ট কিনেছেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকর্মী আরিফুল ইসলাম।

“আরও কিছু কেনাকাটার ইচ্ছে থাকলেও গরম ও ভিড়ের কারণে বাসায় ফিরে যাচ্ছি। অন্য একদিন এসে বাকী কেনাকাটা শেষ করব,” বলেন তিনি।

নিউ মার্কেট এলাকার ‘বুম ফ্যাশনস’র ব্যবস্থাপক মামুন বলেন, ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও বেচাকেনা বাড়েনি। তাদের প্রতিষ্ঠানের সাতটি বিক্রয়কেন্দ্রে এখনও কাঙ্ক্ষিত হারে বেচাকেনা হচ্ছে না।

এই এলাকার এক দরের দোকানগুলোতেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে।

ব্যবসায়ী সাজ্জাদুর রহমান শাহীন তার স্ত্রী ও মেয়ের জন্য কেনাকাটা সারতে পারলেও ছেলের পছন্দমত পাঞ্জাবি কিনতে পারছিলেন না।

সায়েন্সল্যাবে একটি পাঞ্জাবির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদ বলেন, “ছেলের রঙিন পাঞ্জাবি লাগবে- তাই আমরা বিভিন্ন দোকান ঘুরছি। দামের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে।”
ভিড় থাকলেও বিক্রি তেমন হচ্ছে না বলে এই এলাকার একটি পাঞ্জাবির দোকানের বিক্রয়কর্মী মকবুল জানান।

এদিকে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। পোশাকের দোকানগুলোতেই ছিল সবচেয়ে বেশি মানুষের আনাগোনা।

অভিজাত এই শপিংমলে এক ছাদের নিচে অনেক কিছু কেনাকাটার সুযোগ থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে ‘ট্রায়াল’ দেওয়া এবং বিল পরিশোধ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা।

শুক্রবার বিকালে বসুন্ধরায় একটি মেগাশপের ছয়টি কাউন্টারে বিল পরিশোধ করতে লাইনে দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ৬০-৭০ জন।

এদেরই একজন আরিফুজ্জামান বলেন, “বিল পরিশোধ করতে ৩০ মিনিট ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। পোশাক কিনেও ঝামেলা।”

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে শুক্রবার নিজের গাড়ি নিয়ে যারা কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

শপিংমলে যেসব গাড়ি প্রবেশ করছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শপিংমলের সামনের রাস্তা যেন একেবারে বন্ধ না হয়ে যায় এজন্য এই লাইন করে গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়।

গাড়ি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “লাইন ধরে মার্কেটে প্রবেশ করতেই আধ ঘণ্টা লেগে গেল। গাড়ি পার্কিং করে শপিং শুরু করতে আরও আধ ঘণ্টা।”

এই শপিংমলে বেশিরভাগ বিপণিবিতানে এক দরে পোশাক বিক্রি হচ্ছে। আর সেসব দোকানেই ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড়।

বসুন্ধরা শপিংমলে বেশ কয়েকটি দোকানে শিশুদের পোশাকে অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।

নাজনীন সুলতানা নামের একজন গৃহিনী বলেন, “বাচ্চাদের পোশাকে তারা ডাকাতি শুরু করেছে। বাচ্চারা যে পোশাকটি পছন্দ করছে তার দাম রাখা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি।”

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে অন্য এক দরের দোকানের মতোই শিশুদের পোশাকও একদরে বিক্রির দাবি জানান তিনি।

বাইরে প্রচণ্ড গরমের মাঝে দুপুর থেকে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে। ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে গুলশান এক নম্বরের সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, দুই নম্বরের পিংক সিটিসহ বেশি কিছু মার্কেটে।

যমুনা শপিংমলে একটি নারীদের পোশাকের দোকানের মালিক রেহানা ফেরদৌস রীনা বলেন, “আমাদের বেচাকেনা ভালো। সেলোয়ার-কামিজ, বাচ্চাদের পোশাক ও শাড়ীতে আমরা অনেক এগিয়ে আছি।”

গুলশানের পিংক সিটির থান কাপড়ের ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন বলেন, “শবে বরাত থেকে  ‍শুরু হয়ে মধ্য রমজান পর্যন্ত আমাদের ব্যবসা চলে। এবার বিক্রি তেমন ভাল হচ্ছে না।”

গত বছরের এই সময়ের অর্ধেক বেচাকেনা হচ্ছে জানিয়ে গুলশানের স্পার্ক গিয়ারের হিসাব ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার সাহা বলেন, “অনেক মানুষই অবরোধের পরিস্থিতি কাটায়া উঠতে পারে নাই। তাই এই অবস্থা।”

গুলশানের নাভানা টাওয়ারে একটি জুয়েলারির দোকানি দিলীপ কুমার বলেন, ঈদ শপিংয়ে পোশাকের সঙ্গে সোনার গহনা তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে।

“এখন উচ্চবিত্তরা হালকা গহনা কিনেন। অনেকের বিয়ে-শাদী এই সময়ে হয়। তারাও গহনা বানায়। তবে এই ঈদে গহনা বিক্রি গত বছরের চেয়ে একটু ভালো।”

বেলা দেড়টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কে শিশুদের একটি পোশাকের দোকানের ব্যবস্থাপক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এবারের বিক্রি বেশ কম।

ট্রাস্ট মার্টের যমুনা ফিউচার পার্কের শাখা ব্যবস্থাপক মো. সানজিদুল ইসলাম ইভেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সম্প্রতি ব্যবসা শুরু করেছি। তাই আমাদের পুরাতন কোনো কালেকশন নেই। নারী-পুরুষ সকলের জন্য সর্বশেষ ডিজাইনের পোশাক নিয়ে আমরা ট্রাস্ট মার্টের যাত্রা শুরু করেছি। এই কারণে আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালো।”

গুলশান ১ নম্বরে ডিসিসি মার্কেটের পুরুষদের পোশাকের বিক্রয়কর্মী হাসিবুল হক বলেন, “মানুষ ভিড় করলেও কিনছেন না। গত বছরের তুলনায় বিক্রি অর্ধেক।”