ফেলানি হত্যা: বিএসএফের বিচারে অমিয় এবারও ‘খালাস’

কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যা মামলায় বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষকে দেওয়া খালাসের রায়ই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট বহাল রেখেছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিকলকাতা ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2015, 05:01 AM
Updated : 3 July 2015, 08:45 AM

মহাপরিচালকের অনুমোদন পাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকায় বিএসএফ এখনও রায়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি।

তবে ফেলানীর পরিবারের আইনজীবী এবং বিএসএফের একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত শুনানির পর আদালত অমিয় ঘোষকে ‘নির্দোষ’ বলেই রায় দিয়েছে। 

কুচবিহার বিএসএফের ১৮১ ব্যাটেলিয়নের সোনারি ক্যাম্পে বিএসএফের আধিকারিক সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই বিচার হয়।

আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার পর ফেলানীর পরিবার ভারতের আদালতে আপিলের সুযোগ পাবে।

এই রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেছেন, তার মেয়ের হত্যার ন্যায্য বিচার তিনি পাননি।

আমি দুই দফা সাক্ষ্য দিলাম। অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল। তা না করে ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে আমাদের সাথে। আমি ন্যায় বিচারের জন্য আবার আবেদন করব।”

এ মামলায় ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেন কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।”

অবশ্য কুড়িগ্রাম বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকির হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, “আদালতের রায় এখনও অফিসিয়ালি আমরা পাইনি। পেলে ঊধর্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।”  

ফেলানীর কবরের পাশে বাবা ও মা

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে পঞ্চদশী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের এক  সদস্য।

ফেলানীর বাবা নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম ১০ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করতেন। তার সঙ্গে সেখানেই থাকতো ফেলানী।

দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবার সঙ্গে ফেরার পথে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর। এতে ভয়ে সে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়।

কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়।

এরপর ২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট অমিয় ঘোষের বিচার শুরু হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বি এস এফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলই ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রথম রায়টি দেয়, যাতে আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

ওই রায়ের পর বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ফেলানীর পরিবারসহ বিজিবির পক্ষ থেকে রায় নিয়ে প্রকাশ করা হয় ক্ষোভ।

এরপর বিএসএফ মহাপরিচালক সেই রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। নতুন করে নথিভুক্ত করা হয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামের সাক্ষ্য।

পুনর্বিবেচনাতেও খালাসের রায় বহাল থাকায় হতাশা প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন সেই মাসুমের প্রধান কিরিটী রায় বলেছেন, “আদালতে আগেই রায় ঠিক করে রেখেছিল। এ বিচার লোক দেখানো”