সোহেলের স্ত্রী সারাহ ফারগুশান তন্নীর (২৩) মা সামীমা আখতার বৃহস্পতিবার ঢাকায় ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “গত ৭ এপ্রিল রাতে তার একমাত্র সন্তান তন্নীকে তার স্বামী সোহেল বিশ্বাস খুলনার খালিশপুরের নুরনগর বিশ্বাসপাড়ায় নিজের বাসায় হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে।”
ঘটনার রাতে ও পরদিন খালিশপুর থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পরে ১২ এপ্রিল আদালতে নালিশি মামলা করার পর আদালতের নির্দেশে খালিশপুর থানায় হত্যা মামলা হয়।
ওই মামলায় সোহেল বিশ্বাস ও তার বোন ইতি বিশ্বাসকে আসামি করা হয় বলে জানান শামীমা।
তিনি বলেন, “প্রায় দুই বছর আগে ভালবেসে তন্নী সোহেলকে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে বুঝতে পারে সোহেলের একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
“এ নিয়ে কথা বললে সোহেল নানাভাবে তাকে নির্যাতন করত এবং পরবর্তীতে তন্নীকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নির্যাতনের কথা ও ছবি তুলে ধরে তন্নী।”
তন্নীর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে সোহেলের পরিবার তাদের পক্ষে প্রতিবেদন নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের মা।
এ প্রসঙ্গে সামীমা আখতার বলেন, “অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সোহেল বিশ্বাস মারধরসহ নির্মম অত্যাচার করে তন্নীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে, যা আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধ।
“তবে সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃতদেহের মাথা, বুক, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলা হয়।”
গত ১১ মে পুলিশের অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে না রাজি আবেদন করলে আদালত মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করে বলে জানান শামীমা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৮ মে র্যা ব আসামি সোহেল বিশ্বাসকে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে।
“কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ সুস্থ-সবল আসামিকে অসুস্থ দেখিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠায়। সেখান থেকে সোহেল বিশ্বাস আমার স্বামী কামরুল ইসলাম মিন্টুকে মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।”
এসব কিছুর পেছনে গাফফার বিশ্বাসের প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সামীমা।
খুলনা বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি গাফফার বিশ্বাস নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি।
শামীমা আখতার বলেন, “খালিশপুর থেকে নূরনগর পর্যন্ত রেলের জমি দখল করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে বিশ্বাস পরিবার।
“তাদের অত্যাচারে খুলনাবাসী অতিষ্ঠ। জোড়া গেইট এলাকায় মেট্রোপলিটন ফিলিং স্টেশনে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে গাফফার বিশ্বাস ও তার স্বজনরা করেন না।”
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা এসএমএ রব ও কাসেম হত্যা মামলায় আসামিদের তালিকায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা গাফফার বিশ্বাস।
তার বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন নিহত পুত্রবধূর মা।
ছেলে সোহেলের জামিনের জন্য তিনি শ্রমিকদের ব্যবহার করে পরিবহন বন্ধ রাখার ‘ষড়যন্ত্র’ করছেন বলেও অভিযোগ করেন শামীমা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাফফার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস ধর্মঘটের কোনো পরিকল্পনা নেই। আর মেট্রোপলিটন ফিলিং স্টেশন সারা দেশের গর্ব। এখানে কোনো ধরনের অপকর্ম হয় না।
রব ও কাসেম হত্যা মামলা আদালতে বিচারধীন থাকায় এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
রেলের জমি দখলের অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।”
ছেলের বিরুদ্ধে পুত্রবধূ তন্নীকে হত্যার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গাফফার বিশ্বাস বলেন, “তন্নী আত্মহত্যা করেছে। হত্যার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
“পুলিশের তদন্ত ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও আত্মহত্যা বলছে।”
তন্নীর মা সামীমা আখতারকে ‘বাজে নারী’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিশ্বাস পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ করা হচ্ছে।”