যৌন হয়রানির অভিযোগটি মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেছেন, “আমি কলা অনুষদের সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আমার ধারণা, আমাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিচয়টিই বড় করে দেখা হয়েছে। নীল দলের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ বিষয়ক গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্তের দুদিন পর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি করেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের সাবেক এই চেয়ারম্যান।
যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত বছর অধ্যাপক সাইফুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
তদন্ত কমিটি ‘একতরফাভাব’ প্রতিবেদন দিয়েছে দাবি করে সাইফুল বলেন, “সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে আমি ন্যায়বিচার পাইনি।”
সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইনকে প্রধান করে গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন- অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আকতার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহউদ্দিন, অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান এবং অভিযুক্তের পক্ষে প্রতিনিধি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনসুর হাবিব।
তদন্ত কমিটির আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি দাবি করে সাইফুল বলেন, “অভিযোগকারী ছাত্রী এবং বিভাগীয় শিক্ষকগণ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, আমার আত্নপক্ষ সমর্থন প্রশ্নে অভিযোগপত্রের কপি পাওয়ার আইনগত অধিকার থাকলেও আমাকে তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
“অভিযোগপত্রের সাথে জমাকৃত সিডির কপি আমকে দেওয়ার বা শোনানো হয়নি। অভিযোগপত্রের কপিসমূহ ও সিডির কপি চেয়ে আমি কয়েকবার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বরাবর পত্র প্রেরণ করি। কিন্তু আমার আবেদনপত্রগুলো বিবেচনা করা হয়নি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্স ১৯৭৩ অনুসারে প্রাপ্য সুযোগ পাননি দাবি করে তিনি বলেন, “ওই অর্ডিনেন্স অনুসারে কোনো শিক্ষককে শাস্তি প্রদান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। কিন্তু তড়িঘড়ি করে কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন না করেই আমাকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজীরবিহীন।”
‘প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমে’ তদন্ত কমিটি কোন যুক্তিতে লিখেছেন ‘অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে’, তা-ও বোধ্যগম্য নয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন সাইফুল।
তিনি দাবি করেন, পেশাগত সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং রাজনৈতিক হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে তার বিভাগেরই দুজন শিক্ষক একজন ছাত্রীকে দিয়ে যৌন হয়রানির এই অভিযোগ এনে তাকে বরখাস্ত করিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির বক্তব্য
অধ্যাপক সাইফুলের বিবৃতির পর এই বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য নীলিমা আকতার পক্ষপাতের অভিযোগ উড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, “অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে থেকে চার্জ গঠন করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়। তিনি লিখিতভাবে তার উত্তর দিয়েছিলেন।
“তদন্ত কমিটি শুনানিতে অভিযুক্ত শিক্ষক চার ঘণ্টা তার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে কমিটির সদস্যরা তাকে এক ঘণ্টা জেরাও করেন।”
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ অধ্যাপক সাইফুলকে পুরোপুরি দেওয়া হয়েছিল দাবি করে নীলিমা বলেন, “তার পক্ষের প্রতিনিধি তদন্ত কমিটির সদস্য আইনজীবী মনসুর হাবিব অভিযোগকারী ওই ছাত্রীকে জেরাও করেছিলেন।”
ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট কোনো শিক্ষককে নৈতিক স্খলনের কারণে চাকরিচ্যুত করতে পারে, তবে এক্ষেত্রে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সকল বিধিবিধান মেনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।”