সহিংসতা: দায় কি এড়াতে পারে নেতৃত্ব- প্রশ্ন আদালতের

রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যদি মানুষের জান-মালের ক্ষতি হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্ব কি দায় এড়াতে পারে- এই প্রশ্ন এসেছে সর্বোচ্চ আদালতের কাছ থেকে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2015, 03:15 PM
Updated : 2 July 2015, 04:42 PM

অবরোধ-হরতালে নাশকতার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের জামিন স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার তার আইনজীবীর কাছে আপিল বিভাগ এই প্রশ্ন রাখে।

হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে ওই আবেদনের শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। মির্জা ফখরুলের পক্ষে ছিলেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।

এই বছরের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন। তিন মাসজুড়ে চলা ওই কর্মসূচির মধ্যে বহু গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে।

৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া কর্মসূচি আহ্বানের পরদিন গ্রেপ্তার ফখরুলকে পরে নাশকতার কয়েকটি মামলায় আসামি করা হয়। তার কয়েকটিতে তিনি হাই কোর্ট থেকে জামিন পেলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আসে রাষ্ট্রপক্ষ।

অবরোধে জ্বালিয়ে দেওয়া একটি বাস। বছরের শুরু তিন মাসে এই ধরনের অসংখ্য গাড়ি পোড়ানো হয়, যাতে প্রাণও হারান অনেকে (ফাইল ছবি)

নাশকতায় নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগের মধ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে কর্মসূচি আহ্বানকারী হিসেবে দায় থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। 

মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যে তিনটি মামলা আদালতে ছিল তিনটি পল্টন থানার। একটি ৪ জানুয়ারির, একটি ৫ জানুয়ারির ও আরেকটি ৬ জানুয়ারির। অর্থাৎ একদিন পর পর পরই তারা এই ধ্বংসাত্মক কাজগুলো চালিয়েছে।

“সাধারণভাবে এই ধ্বংসকাজ চালানো হত না, যদি না এই রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো না দেওয়া হত। কাজেই রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার ফলে যদি কোনো রকম সম্পত্তি নষ্ট হয়, মানুষ মারা যায় এবং মানুষের ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে এই ঘোষণা দেওয়ার পিছনে প্রোগ্রাম দেওয়ার পিছনে যাদের ভূমিকা বা নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি, তাদের দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে। এই কথাটা আমি আজকে বলেছি।”

দণ্ডবিধির ধারার প্রসঙ্গ টেনে মাহবুবে আলম বলেন, “কোনো ব্যাক্তি যদি আগুন নিজে কোনো অপরাধ না করেন, আগুন দেওয়ার পেছনে বা মারার পেছনে বা ধ্বংসাত্মক কাজ নিজের হাতে করলেন না, তার দেওয়া প্রোগামের পরিপ্রেক্ষিতে হয় তাহলে তো নিশ্চয়ই তার দায়-দায়িত্ব থাকবে।”

আদালতও বিষয়টি বলেছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

“কথাটা হচ্ছে আজকে গাড়ি ভাঙা হচ্ছে না, যেহেতু আজকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নাই। আবার যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হবে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ওপেনলি যদি নাও বলেন, তোমরা গাড়ি পোড়াও, তোমরা ভাঙ। যদি দেখা যায় তাদের প্রোগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, ভাঙা হচ্ছে তাহলে সেই দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।”

সুপ্রিম কোর্ট

নেতৃত্ব দায় এড়াতে পারে না বলেই কি আদালত বলেছেন- এই প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, “হু।”

বিএনপি নেতার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, “আদালতের মন্তব্য ছিল, যেহেতু আপনারা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, তার ফলে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে। অতএব আপনাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।”

“এর উত্তরে আমি বলেছি.. দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) বার বার বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হবে। আমাদের মহাসচিবের তরফ থেকেও এমন কোনো বক্তব্য নেই যে, উনি কোনো রকম উসকানি দিয়েছেন,” বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।

তিনি বলেন, “তার (ফখরুল) বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ উসকানি দেওয়া।..এখন বিষয়টি বিচারে আছে। বিচারে প্রমাণ হলে তখন দেখা যাবে।

“একই ধরনের তিনটি মামলায় স্বাস্থ্যগত কারণে হাই কোর্ট তাকে জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ তা বহালও রেখেছে।”