বাংলাদেশকে ‘উঁচুতে নিতে’ সবই করব: প্রধানমন্ত্রী

আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘উচ্চ-মধ্যম’ আয়ের দেশে পরিণত করার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো ‘নিম্নতে’ থাকতে চায় না, সবসময় ‘উচ্চতে’ উঠতে চায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2015, 07:03 AM
Updated : 2 July 2015, 05:26 PM

তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রার আগেই আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘মধ্যম আয়ের দেশে’ পরিণত করতে যা যা দরকার, তার সবই সরকার করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবেই আমাদের দেশকে উন্নত করতে হবে। এজন্য যে যেখানে আছেন, যার যার কর্মস্থলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন এই কারণে যে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ বলা হয়েছে।”

বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে তাদের সূচকে বাংলাদেশ ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ থেকে এক ধাপ এগিয়ে ‘নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের’ কাতারে পৌঁছেছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সেই কাতারে পৌঁছে গেছে।

অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশকে আরও ওপরে দেখতে চান।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও একে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কখনো কোনো নিম্নতে থাকতে চায় না। সবসময় উচ্চতে উঠতে চায়। কাজেই উচ্চতে উঠার জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করব।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কক্সবাজার এলাকায় প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং বর্ষা মৌসুম শেষ হলে ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামতের আশ্বাস দেন।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ এয়ারপোর্টটাকে আমরা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই, এর কারণ রয়েছে। আমরা বিপুল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। সেই সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনে এ এয়ারপোর্টটিকে ব্যবহার করা হবে।”

৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের পর কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

এর অংশ হিসাবে বিমানবন্দরের বর্তমান চয় হাজার ৭৭৫ ফুট রানওয়ে বাড়িয়ে করা হবে নয় হাজার ফুট। এছাড়া রানওয়ের প্রস্থ দেড়শ ফুট থেকে বাড়িয়ে করা হবে দু’শ ফুট। রাতে অবতরণ ও উড্ডয়নের সুবিধার জন্য এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম বসানো হবে।

আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য নতুন অগ্নি নির্বাপক যানবাহনও কেনা হবে কক্সবাজারের জন্য।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম অনুষ্ঠানে জানান, নতুন সুযোগ-সুবিধা চালু হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭ এর মতো সুপরিসর বিমানও অবতরণ করতে পারবে।

প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরও সুপরিসর বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য এই রানওয়ের দৈর্ঘ্য সাড়ে দশ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত এতো দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্র সৈকত কোথাও নেই।

“আমাদের লক্ষ্য- দেশীয় ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করা। ওই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”  

কক্সবাজারকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মহেশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনালসহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়াল গেজ রেল লাইন স্থাপনের কাজও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন কেন যে হয়নি? তা জানি না। এখন সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব।”

কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের মধ্যে ‘হাব হবে’, এমন আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কক্সবাজারকেই বেছে নেবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরে ‘রি-ফুয়েলিংয়ের’ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক বিমানগুলো যখন যাতায়াত করবে, তখন শুধু পর্যটন নয়, রি-ফুয়েলের জন্যও বিমান নামতে পারে। কাজেই অনেক চিন্তাভাবনা করেই কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি।”

এছাড়া ভারতের মধ্যে দিয়ে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আশা করি, ছয় মাসের মধ্যে আমরা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব।”

বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন ও ভারতকে নিয়ে একটি পৃথক বাণিজ্য এলাকা সৃষ্টির উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এসব বাস্তবায়িত হলে পুরো কক্সবাজার এলাকার সবারই আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। একদিকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। অন্যদিকে, বাণিজ্য সম্প্রসারণের দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।”

কক্সবাজারের প্রতি ‘বিশেষ দুর্বলতার’ কথা জানিয়ে ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথাও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।  

“আমাদের ভাগ্যটাই এমন, আমাদের বাবা বেশিরভাগ সময় জেলেই থাকতেন। শীতকালে যখনই বাড়িতে থাকতেন, আমাদের কক্সবাজারে নিয়ে যেতেন।”

ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ছিলেন কক্সবাজার বিমানবন্দরে।