সিটি নির্বাচন: সাংবাদিক নাজেহালে চিহ্নিত হয়নি কেউ

ঢাকায় সিটি নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশনের তদন্ত কমিটি।  

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2015, 03:59 AM
Updated : 2 July 2015, 12:33 PM

দুই মাস ধরে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট শ’ খানেক ব্যক্তির শুনানি শেষে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটি মঙ্গলবার কমিশন সচিবের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সাংবাদিকদের লিখিত অভিযোগ যথাযথ ও পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত না হওয়ায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধাদান অথবা নাজেহাল করার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বা কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা যায়নি।”

বাধা-নাজেহালের প্রমাণ ‘না পাওয়ার’ কথা বললেও কমিটির এই প্রতিবেদনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ির সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা তদন্তে এ কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির আহ্বায়ক ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ২৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্টদের শুনানির কাগজপত্র মিলিয়ে ৩৪০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনটি বিবেচনার জন্যে কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে।”

চট্টগ্রাম সিটির প্রতিবেদনও শিগগিরই জমা দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান।

ভোটের দিন সাংবাদিকদের বাধা ও নাজেহালের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা গণমাধ্যমেই এসেছে। ওই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ ও ইসি সচিব মো. সিরাজুলই ইসলামও ভোটকেন্দ্রে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।

পরে তদন্ত কমিটি হলে ঢাকার দুই ভাগে নাজেহালের ঘটনায় ৩০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়। সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয় সাংবাদিকদেরও।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানিতে কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, পুলিশ, নির্বাহী হাকিম, পর্যবেক্ষক কেউ সাংবাদিকদের বাধা-নাজেহালের ঘটনা স্বীকার করেননি। সাংবাদিকরা সাক্ষ্য দিতে এসে বাধা-নাজেহালের বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু মুখোমুখি শুনানিতে অন্যরা এলেও সাংবাদিকরা আর আসেননি।”

যথাযথ তথ্য দিতে ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ‘প্রমাণ করা’ সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।

ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার ‘পুনরাবৃত্তি’ না ঘটে সে জন্যে কয়েক দফা সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় সাংবাদিকদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার অবাধ সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নির্বাচনী আইন-বিধি সম্পর্কে ‘জ্ঞান থাকতে হবে’।

“শিক্ষানবীশ সাংবাদিকদের ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে পাঠানো সঙ্গত হবে না। একসঙ্গে কতজন সাংবাদিক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন, ভোটার-প্রার্থী-পোলিং এজেন্ট, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কার সঙ্গে কতক্ষণ, কী কথা বলবেন, কোন বিষয়ে চিত্র ধারণ করবেন-তার বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা বাঞ্ছনীয়।”

ভোটের দিন দায়িত্ব পালনের জন্য ইসি সাংবাদিকদের যে ‘কার্ড’ দেয় তাতে বিশদ নির্দেশনা রাখারও সুপারিশ করেছে কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটের দিন ‘ভোটকেন্দ্রের প্রবেশাধিকার’ বিধানটি কঠোরভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। তা নিশ্চিত করা গেলে ভোটকেন্দ্র দখল বা দখল পরবর্তী জটিলতা, সাংবাদিকদের ছবি তোলার বিড়ম্বনা অনেকাংশে কমবে।