যুক্তরাজ্যর বাংলাদেশি এক পরিবার হঠাৎ ‘গায়েব’

যুক্তরাজ্য থেকে স্বদেশ ঘুরে ফেরার পথে উধাও হয়ে গেছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একটি পরিবার, যা নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে প্রবাসীদের মধ্যে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 11:32 PM
Updated : 2 July 2015, 06:34 AM

বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরে বসবাসরত ১২ সদস্যের ওই পরিবার সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে বলে যুক্তরাজ্য পুলিশের ধারণা।

তবে ওই পরিবারের অন্য সদস্যরা এ বিষয়ে কিছু না বললেও নিখোঁজ স্বজনদের নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধের মধ্যে ওই পরিবারের মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাওয়ার খবরে তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশিরাও উদ্বিগ্ন।

নিখোঁজ ১২ সদস্যের ওই পরিবারে তিনটি শিশু রয়েছে। বয়োবৃদ্ধ দুজনের মধ্যে একজন নারী ক্যান্সারের এবং পুরুষ ডায়াবেটিস রোগী বলেও যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের খবর।

পরিবারটির সদস্যরা হলেন- মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান (৭৫), তার স্ত্রী মিনারা খাতুন (৫৩), তাদের মেয়ে রাজিয়া খানম (২১), ছেলে মোহাম্মদ জায়েদ হুসাইন (২৫), মোহাম্মদ তৌফিক হুসাইন (১৯), মোহাম্মদ আবিল কাশেম সাকের (৩১) এবং তার স্ত্রী সাঈদা খানম (২৭); মোহাম্মদ সালেহ হুসাইন (২৬), তার স্ত্রী রশানারা বেগম (২৪) এবং তাদের তিন সন্তান, যাদের বয়স এক থেকে ১১ বছর।

যুক্তরাজ্য পুলিশকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, গত ১০ এপ্রিল এই পরিবারটি বাংলাদেশে যায়। এক মাস পর ১১ মে তারা ফেরার জন্য রওনা হন। ১১ মে তারা ইস্তাম্বুল পৌঁছলেও তিন দিন পর তাদের লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা থাকলেও তারা আসেনি।

তুরস্ক থেকে সিরিয়া যাওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করলেও বেডফোর্ডশায়ার পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারটি ঠিক কবে নাগাদ সীমান্ত অতিক্রম করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। বিষয়টির তদন্ত চালাচ্ছে তারা।

পরিবারটির কোনো সদস্যের নাম সন্ত্রাসীদের তালিকায় ছিল কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

তবে ওই পরিবারের কয়েকজন নারী উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। তারা সন্দেহ করছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তারাই পুরো পরিবারটি নিয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন।

ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নামা আইএস-এ যোগ দিতে যুক্তরাজ্য থেকে অন্তত ৪২ জন ইতোপূর্বে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে, এর মধ্যে লুটনের একজন রয়েছেন। আইএস সংশ্লিষ্টতার জন্য লুটনের আরেক নারীকে কারাগারে যেতে হয়েছে। 

কমিউনিটি নেতা আশুক আহমেদ টেলিগ্রাফকে বলেন, ওই পরিবারটিকে তিনি ৩৫ বছর ধরে চেনেন।  

“তারা ছুটি কাটাতেই দেশে (বাংলাদেশে) যাওয়ার কথা জানিয়েছিল, এনিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিল না। আমার ধারণা ফেরার পথে তুরস্কে তাদের আটকানো হয়।”

“যখন তারা নির্ধারিত সময় (১৪ মে) যুক্তরাজ্যে ফিরল না, তখন তাদের পরিবার থেকে উদ্বেগ জানানো হয়। তারা সন্দেহ প্রকাশ করে যে সম্ভবত সিরিয়ায় গেছে পরিবারটি,” বলেন আশুক।

লুটনে ওই পরিবারের প্রতিবেশীদের একজন সৈয়দ হুসাইন বিবিসিকে বলেন, পরিবারটি এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতে গেছে এবং খোঁজ-খবর করেছে।

“আমি শুনেছি, তারা সিরিয়া চলে গেছে। বয়োজ্যেষ্ঠ দুজনের জন্য খারাপ লাগছে। খুব সম্ভবত এসবের কিছুই তারা জানেন না।”

মান্নানের আগের স্ত্রীর দুই ছেলে (তারাও লুটনে থাকেন) পরিবারটির নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশকে জানায় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

তবে বিবিসির পক্ষ থেকে তাদের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ওই পরিবারের যুক্তরাজ্যে থাকা স্বজনদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “স্বজনদের এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় তারা ভেঙে পড়েছেন। কারণ এ আচরণ তাদের স্বভাববিরুদ্ধ।”

আশুক আহমেদ বলেন, ওই পরিবারের একজন যুক্তরাজ্যে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুই সপ্তাহ আগে যোগাযোগ করেছে বলে তিনি শুনেছেন।

“আমি শুনেছি, ফোনে তারা স্বজনদের বলেছে যে তারা নিরাপদে আছে এবং তাদের নিয়ে চিন্তা করতে মানা করেছে।”

পুলিশও বলেছে, যুক্তরাজ্যে থাকা স্বজনদের সঙ্গে পরিবারটি যোগাযোগ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তবে তারা কোথায় রয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি।

পরিবারটির এই অন্তর্ধানে বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়িয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের লন্ডন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

কেউ কেউ সিরিয়ার কথাই বিশ্বাস করছেন। কেউ কেউ বলছেন, তারা সম্ভবত ওমরাহ পালনে সৌদি আরব গেছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্থানীয় ব্যবসায়ী ওলি খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরো ঘটনাটি দুঃখজনক। কিছু দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এখন পুলিশ তদন্ত শুরুর পর গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে।

“এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবাই বেশ উদ্বিগ্ন,” বলেন তিনি।