কারাগারে যেতে হলো নিহত মিরাজের বাবাকেই

লালবাগে বাসায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিহত শিশুর বাবা ইয়াকুবকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 03:44 PM
Updated : 1 July 2015, 04:02 PM

বুধবার তিনদিন পুলিশ হেফাজত শেষে আদালতে নেওয়া হলে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।

২৫ জুন বিকেলে লালবাগের রিয়াজউদ্দিন রোডে ইয়াকুবের বাসায় বিস্ফোরণে তার ছয় বছরের ছেলে মিরাজ রহমান (৫) মারা যায়। আহত হয় মেয়ে নেহা আক্তার (১১)।

ঘটনার পর পরই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়াকুবকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

থানায় আনার কারণ জানতে চাইলে সেই সময় পুলিশের ভাষ্য ছিল, “তিনি আটক নন, জিজ্ঞাসাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।”

ঘটনায় একদিন পর শুক্রবার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেক মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করছিলেন। তবে তাতে ইয়াকুবকে ‘সন্দিহান’ উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ শুরু থেকেই বলে আসছে, বোমাটি ওই বাসায়ই ছিল। কিন্তু ওই বাড়ির লোকজন বলছে বোমাটি বাইরে থেকে জানালা দিয়ে ছোড়া হয়েছে।

অবশ্য পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাইরে থেকে কেউ বোমা নিক্ষেপ করেছে। যদিও কারও সঙ্গে তাদের বিরোধ নেই বলে জোর দাবি।

ওই বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে কক্ষে বোমাটি বিস্ফোরিত হয় সেই কক্ষের দক্ষিণে বেশকিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে মিরাজের বাড়ির সদস্যরা স্নান করেন।

দোতলার টিনশেডের দক্ষিণে দুটি জানালা রয়েছে; বড় জানালাটি বন্ধ, ছোটটি খোলা। ছোট জানালার চার ইঞ্চি ব্যবধানে রয়েছে লোহার রড। আর জানালা থেকে প্রায় ত্রিশ গজ দূরে পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে একটি বহুতল ভবন, দক্ষিণ-পূর্বপাশে আরেকটি একটি দোতলা ভবন- তাও আনুমানিক বিশ গজ দূরে।

লালবাগ জোনের পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আর এম ফয়জুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই মামলায় সন্দিহান দেখিয়ে ইয়াকুবকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে আনা হয়।

পুলিশ হেফাজতে দায় স্বীকার করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইয়াকুবের কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে পুলিশের ধারণা, মাদকাসক্ত ইয়াকুব বোমার বিষয়টি জানেন।”

চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, বুধবার তিন দিন পুলিশ হেফাজত শেষে ইয়াকুবকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

ঘটনার সময় ওই কক্ষে নিহত মিরাজের বোন নেহা ছাড়াও ছিলেন তার মা সাহিদা বেগম।

সাহিদার দাবি, হঠাৎ খাটের ওপর কিছু একটা পড়ল মনে হলো, এগিয়ে গিয়ে দেখার আগেই মিরাজের হাতে সেটি বিস্ফোরিত হয়। পাশে নেহাও ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “বোমার কথা জানতে চাইলে ইয়াকুব বলেন, স্যার আমারও প্রশ্ন বোমা কীভাবে ঘরে আসল? আর ওই ছোট জানালা দিয়ে বোমাটি ভেতরে আসবে না। তা আমারও মনে হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে বোমাটি ভেতরে আসলো তা আপনারা (পুলিশ) তদন্ত করুন।”

তার চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ইয়াকুব ও দুই মেয়ে বিয়ে করেছে। চার কাঠা জমির মধ্যে ছয়টি দোকান ও সাতটি ঘর রয়েছে। ছয়টি দোকান ও দুটি ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

ইয়াকুব আগে নানা ধরনের ব্যবসা করলেও লোকসান হওয়ায় গত এক বছর ধরে বেকার। ঘর ভাড়ার টাকা দিয়েই ইয়াকুবের সংসার চলছিল।