‘ঈদ পর্যন্ত মহাসড়কে গাড়ির কাগজ তল্লাশি নয়’

ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিতে ও যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঈদের সময় পর্যন্ত মহাসড়কে কোন ধরনের গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি করা হবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 12:45 PM
Updated : 1 July 2015, 12:45 PM

বুধবার চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার।

ঈদের ঘরমুখো মানুষের ‘নিরাপদ বাড়িফেরা’ নিশ্চিত করতে মহসড়কে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের নেয়া নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।

পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, "ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে ও যান চলাচলে যাতে কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য ঈদের সময় পর্যন্ত মহাসড়কে কোন ধরনের গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি করা হবে না"

তবে এসময় কোন গাড়ি আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

পুলিশ সুপার আরও জানান, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্থানে ও মার্কেটে ৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করা হয়েছে।

কোন ধরনের সমস্য হলেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গর্ত ও ভাঙ্গার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশির নামে পুলিশি হয়রানি ও মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা উচ্ছেদের দাবি জানান পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

রাস্তা সংস্কার বিষয়ে পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, "প্রতিদিন রাতে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি মহাসড়কের অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে।"

এ বিষয়ে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন বলেন, "গত কয়েকদিনের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে মহাসড়কে বিভিন্ন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

"ইতোমধ্যে ফোরলেইন প্রকল্পের আওতায় সেগুলো সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই সংস্কার কাজ শেষ হবে এবং ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের কোন ধরনের দুর্ভোগ হবে না।”

পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, “চাঁদাবাজিতে পুলিশ জিরো টলারেন্স দেখাবে।"

কোন পুলিশ সদস্য যদি এ ধরনের কোন কাজে জড়িয়ে পড়েন তবে তার বিরুদ্ধে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

এসময় পরিবহন মালিকরা মহাসড়কে চলাচল করা অটোরিকশা উচ্ছেদের দাবি জানালে তিনি বলেন, “ঈদের আগে জনগণের ভোগান্তি হয় এমন কোন ধরনের সিদ্ধান্ত পুলিশ গ্রহণ করবে না।”

তবে সড়কের ওপরে কোন ধরনের অটোরিকশা পার্কিং করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন পুলিশ সুপার।

মহাসড়কে ডাকাতি ও দুর্ঘটনা রোধে মালিক-শ্রমিকদের সজাগ থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “কোন যাত্রী যেন বাস স্টেশনে মলম ও অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে না পড়ে সে বিষয়টি মালিক-শ্রমিকদের নজরে রাখতে হবে।”

এছাড়াও বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করে রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে এবং আইন মেনে গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভারদের সজাগ করতে মালিক-শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ জানান পুলিশ সুপার।

ওয়েট স্কেলে চাঁদাবাজি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে ওয়েট স্কেলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মীদের বিরুদ্ধে পরিবহন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে পুলিশ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, গড়ির ওজন পরীক্ষার জন্য ওয়েট স্কেলে দাঁড়ানোর কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার অভিযোগের সত্যতা নিয়ে সীতাকুণ্ড সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকদার ও হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাইলে তারা অভিযোগটি সত্য বলে জানান।

দুই সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, "ওয়েট স্কেলে পরিবহনে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের অভিযোগে দায়িত্বরতরা চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত পণ্য বোঝায় গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।"

বৈঠকে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন জানান, কিছুদিন বন্ধ থাকার পর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সম্প্রতি ওয়েট স্কেলটি পুনরায় চালু করা হয়।

এজন্য হাইওয়ে পুলিশকে অবহিত করে এবং কমপক্ষে এসআই পদমর্যদায় একজন পুলিশ সদস্যকে সার্বক্ষণিক স্কেল অফিসে রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার বলেন, "স্বচ্ছভাবে ওয়েট স্কেল চালু না হওয়া পর্যন্ত কোন পুলিশ সদস্য মেতায়েন করা হবে না।"

ঈদে ওয়েট স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানানো হলে পুলিশ সুপার বিষয়টি সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর সাথে আলাপ করবেন বলে আশ্বাস দেন।