কম দামে হতাশ শ্রীপুরের কাঁঠাল চাষিরা

গাজীপুরের শ্রীপুরে কাঁঠালের বাজার এখন জমজমাট হলেও দাম কম থাকায় আশাহত হচ্ছেন কৃষকরা।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 11:31 AM
Updated : 1 July 2015, 12:38 PM

গাজীপুরের প্রায় বাড়িতেই উঠান-ঘর-বারান্দায় কাঁঠালের ছড়াছড়ি। উঁচু লাল মাটির এ জেলার চারিদিকে শুধু পাঁকা কাঁঠালের ঘ্রাণ। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রইসউদ্দিন ভূইয়া শাহীন আশা করছেন, চলতি বছর শ্রীপুরে তিন হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ৭৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি কাঁঠাল ফলবে।

ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সবকটি বাজার। খামারীদের জন্য কৃষি বিপণন ব্যবস্থা ভাল করা হয়েছে। কৃষকদের যে কোন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতায় তারা তৎপর বলেও জানালেন তিনি।

গাজীপুর শহর থেকে অল্প সময়েই যাওয়া যায় শ্রীপুরের জৈনাবাজারে। সম্প্রতি এক সকালে জৈনাবাজার পৌঁছানোর আগেই দেখা যায় যানজট। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সামনে গিয়ে চোখে পড়ে কাঁঠালের হাট। কাঁঠালের হাটের কারণেই এই যানজট।

বাজার ছাড়িয়ে মহাসড়কের অর্ধেকজুড়ে কাঁঠালের বিশাল হাট। ছোট ছোট ঠেলাতেও কাঁঠাল নিয়ে বাজারে আসছেন অনেকে। সড়কের পশ্চিম পাশে সারিবদ্ধভাবে ঠেলাগাড়ি, ট্রাক, রিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্রেতারা। ব্যাপারী আর আড়ৎদাররা কিনে পাশেই স্তুপ করছেন কাঁঠাল।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এই জৈনাবাজার। আশপাশেই বিপুলসংখ্যক কাঁঠাল বাগান, ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পাইকারদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার কারণে জৈনাবাজার দেশের সব চেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা।

জৈনাবাজার ছাড়াও সিডস্টোর, মাওনা চৌরাস্তা (কেওয়া পশ্চিমখণ্ড) বাজার, বাঘের বাজার, বানিয়ারচালা ও ভবানীপুর বাজারে মহাসড়ক ঘেঁষে বড় বড় কাঁঠালের বাজারও বসছে। মধুমাস জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকে এ চিত্র দেখা যায় আষাঢ়ের শেষ পর্যন্ত বললেন তারা।

শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় ৮৫টি কাঁঠাল গাছের মালিক রফিকুল ইসলাম। সেদিন ২৭টি কাঁঠাল এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন।

গাজীপুরের শ্রীপুরে কাঁঠালের বাজার

ওই এলাকার ১২০টি কাঁঠাল গাছের এক বাগানের মালিক সামছুল হক বলেন, “প্রতিদিনই কাঁঠাল নিয়ে বাজারে আসি। বিক্রি করে বাড়ির জন্য বাজার করে বাড়ি চলে যাই।”

জৈনাবাজারের কাছেই কাছর গ্রাম। সেখান থেকে এসেছেন ফিরোজ মিয়া। ১৮শ’ টাকায় বেচার আশা নিয়ে এলেও ৫০০ টাকায় তাকে বেচতে হয় ১৪টি কাঁঠাল।

ঢাকার গুলশান থেকে আসা ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় এখান থেকে কাঁঠাল কিনে বিক্রি করলে ভাল লাভ হয় তার। পাঁচ হাজার টাকায় ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে ২২০টা কাঁঠাল কেনেন তিনি।

জৈনাবাজার হাটের ইজারাদার মো. মঞ্জুর হোসেন জানান, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারা সেখানে আসেন। প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাক কাঁঠাল যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। কাঁঠাল প্রতি ইজারাদার পান এক টাকা করে।

শ্রীপুরে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণ কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে চাষিরা উপকৃত হতে পারে বলে মনে করেন শ্রীপুরের এক স্কুলশিক্ষক মো. জলিল মিয়া।