নাগরিক সেবায় কর্মকর্তাদের আন্তরিক হওয়ার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

জনগণের আস্থা অর্জনে নাগরিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিকভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 10:11 AM
Updated : 1 July 2015, 10:41 AM

তিনি বলেছেন, “আমি আশা করি, উন্নত নাগরিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় করতে আপনারা ঐকান্তিকভাবে কাজ করে যাবেন।”

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এর আওতাধীন ছয়টি সংস্থার মধ্যে বার্ষিক কর্ম-সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, “বার্ষিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন স্তরের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। এই পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি সরকারি সংস্থা তাদের অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।”

উপস্থিত কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, জনগণের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সরকারে ‘অন্যতম লক্ষ্য’। আর সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়ন করা ‘কঠিন কিছু নয়’।

“বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নয়।”

সরকার প্রধানের কার্যালয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সকল মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রবিন্দু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী আলাদা কিছু না। মন্ত্রিপরিষদের এক নম্বর মন্ত্রী।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রায়ন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তার সরকার ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’।

ফলাফলভিত্তিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রথমবারের মতো কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর করে।এবার দ্বিতীয়বারের মতো এই চুক্তি হল।

গতবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং এর আওতাধীন বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অফিসের মধ্যে এ চুক্তি হয়েছিল।

এবার এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার প্রত্যাশা, এ চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে এসকল সংস্থার কাজে গতিশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।”

এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে এ কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট ‘বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা’ দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সকলের চেষ্টায় প্রথম বছরেই এ ব্যবস্থার সুফল পাওয়া গেছে।

সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এজন্য সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা প্রয়োজন।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ বোর্ডের দেশি বিনিয়োগ পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৭১৫ মিলিয়ন ডলার। গত বছর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরের নয় মাসের মধ্যে বিনিয়োগ বোর্ড ছয় হাজার ৭২৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত করে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেপজায় ৩২৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ওই সময়ে ১২১টি দেশে ১২৮টি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তিন লাখ ৮৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে বলা হয়।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১২৫টি দেশে ১৫৫ ধরনের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই বেপজা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেপজার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছি তিন লাখ ৯০ হাজার। নয় মাসের মধ্যেই চার লাখ ১১ হাজার ৭৭ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এর আওতাধীন ছয়টি সংস্থার মধ্যে বার্ষিক কর্ম-সম্পাদন চুক্তি হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই চুক্তির ফলেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছিল তা পূরণে সক্ষম হয়েছে।”

এর মধ্যে দুটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়াত্ত এ প্রতিষ্ঠান পাঁচশ কোটি টাকার দেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে বলেও তিনি জানান।

নতুন এ পদ্ধতির ফলে অন্যান্য সংস্থার মতো এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর বৈদেশিক অনুদান প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বৈদেশিক অনুদানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে এ ব্যুরোর প্রকৃত অর্জন লক্ষ্যমাত্রাকে ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে।”

২০১৪-১৫ অর্থবছরে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ৫১৮ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে সহায়ক উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি প্রায় ৪০ হাজার ব্যক্তিকে আত্মকর্মসংস্থান উপকরণ দিয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অফিসও এ ব্যবস্থার সুফল পেয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পিপিপি প্রকল্প চিহ্নিতকরণ, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, বিনিয়োগ উন্নয়ন- ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অর্জন আশানুরূপ।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোর কর্মসম্পাদন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সরকারের ৪৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেরও চুক্তি হয়েছে।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কর্মসম্পাদন পদ্ধতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সচিব সুরাইয়া বেগম।

অন্যদিকে বেপজার পক্ষে নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের পক্ষে নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক নুরুন নবী তালুকদার, আশ্রয়ণ-২ এর প্রকল্প পরিচালক মো. জহিরুল হক, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদ আফসর এইচ উদ্দিন এবং বিনিয়োগ বোর্ডের সচিব আয়ুব আলী চুক্তিতে সই করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মশিউর রহমান ও গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর প্রধানরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রকাশনা ‘সদাচার’ সঙ্কলনের মোড়ক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।