কলেজ ভর্তি: ভুয়া আবেদনের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা

কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে নিজের অজান্তে অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন জমা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন এসএসসি উত্তীর্ণ হাজারো শিক্ষার্থী।   

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 02:58 PM
Updated : 1 July 2015, 05:52 AM

সংশ্লিষ্ট বোর্ডে লিখিত আবেদন করে ‘ভুয়া আবেদন’ সংশোধনের সুযোগ পেলেও এসব শিক্ষার্থী যোগ্যতানুযায়ী নিজের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

অবশ্য বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ মনে করেন, নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে খুব সহজেই এই জটিলতা ঠেকানো সম্ভব।

এ বছর বাধ্যতামূলকভাবে সব শিক্ষার্থীকে অনলাইন বা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির আবেদন করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পাঁচটি কলেজকে ক্রমানুযায়ী পছন্দের তালিকায় রাখতে পেরেছেন।

আর শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম অনুযায়ী এসএসসির জিপিএর ভিত্তিতে কলেজ নির্ধারণ করে দিচ্ছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। ইতোমধ্যে ওই তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।

শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে বেনামে একজনের আবেদন অন্যজন জমা দিয়েছে বলে তাদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে।

এছাড়া কোনো কোনো কলেজ ভাল শিক্ষার্থীকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে ওইসব শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের নামে আবেদন করে নিজেদের কলেজকে পছন্দতালিকার শীর্ষে রেখেছে বলেও জানান তারা।

এ ধরনের অভিযোগে কোনো ভুয়া আবেদনকারীকে শনাক্ত করা না গেলেও বিভিন্ন বোর্ডের অধীন শতাধিক কলেজকে শোকজ করা হয়েছে।

যশোর বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অমল কুমার বিশ্বাস জানান, তাদের বোর্ডে এক হাজার শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন তাদের নামে অন্য কেউ আবেদন করেছেন। তবে কে বা কারা এটি করেছে তা ধরা যায়নি।

এ অভিযোগে বোর্ডের অধীন ১৬টি কলেজকে শোকজ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এক হাজার শিক্ষার্থীর অভিযোগ বুয়েটের আইআইসিটিকে পাঠালে তারা কিছু সংশোধন করেছে।”

তবে কোনো শিক্ষার্থীর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের জটিলতায় পড়ে পছন্দের ভাল কলেজে আসন শেষ হলে ভর্তি হতে ঝামেলায় পড়বে বলেও মনে করেন অমল কুমার।

ঢাকা বোর্ডের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আইডিয়াল কলেজে ভর্তির প্রতিযোগিতায় যেন দাঁড়াতেই না পারি সেজন্য কেউ আমার নামে ভুয়া আবেদন করে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে আমার পছন্দের এক নম্বরে রেখেছে। আমার কলেজ লিস্টে আইডিয়াল নেই।”

“বিষয়টি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জানতে পারি আমারই একজন কাছের বন্ধু এই কাজটি করেছে। সে নিজে এক নম্বরে রেখেছে আইডিয়াল কলেজকে।”

ভুয়া আবেদনের বিষয়ে ঢাকা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, “বোর্ড বলেছে আমাকে আবার আবেদনের সুযোগ দেবে। তবে আইডিয়ালে আসন শেষ হয়ে গেলে আবেদন করে লাভ কি?”

বরিশাল বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক লিয়াকত হোসেন জানান, এই বোর্ডের ১৮৯ জন শিক্ষার্থী লিখিত আবেদনে জানিয়েছে তাদের নামে অন্য কেউ আবেদন করেছে।

এসব শিক্ষার্থীর আবেদন সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নামে ভুয়া আবেদন করার বরিশাল বোর্ডের পাঁচটি কলেজকে শোকজ করা হয়েছে।

ভুয়া আবেদন জমা দেওয়ায় সুযোগ পাওয়ায় অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে বলেও জানান এই কলেজ পরিদর্শক।

তিনি বলেন, “দুই-একজনের জন্য পুরো সিস্টেমটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।”

সিলেট বোর্ডে শতাধিক শিক্ষার্থী তাদের নামে ভুয়া আবেদন জমা নিয়ে অভিযোগ করেছেন বলে জানান এই বোর্ডের সেকশন অফিসার আবুল কালাম।

বিভিন্ন বোর্ডে ভুয়া আবেদনের বিষয়ে অভিযোগ আসার পর বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের কাছে লিখিত আবেদনের নির্দেশনা দেয়।

ভুয়া আবেদন জমা পড়ায় আবেদন জমার সীমা ১৮ জুন থেকে বাড়িয়ে ২১ জুন পর্যন্ত করা হয়। এই তিন দিন শিক্ষার্থীদের একাধিক আবেদন করারও সুযোগ দেয় আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি।

এই কারণে ১১ লাখ ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করলেও মোট আবেদনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ লাখ। আর একসঙ্গে এত আবেদন প্রক্রিয়া করতেই সফটওয়্যারে কারিগরি জটিলতা দেখা দেয়।

দিনাজপুর বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ফারাজ উদ্দিন তালুকদার জানান, তাদের বোর্ডে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ভুয়া আবেদনের লিখিত অভিযোগ করায় তা সংশোধন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “স্টুডেন্টদের না জানিয়ে তাদের রোল-রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে আবেদনগুলো করা হয়েছিল।”

এই ঘটনায় দিনাজপুর বোর্ডের এক শিক্ষার্থী থানায় জিডি করেছেন বলেও জানান ফারাজ উদ্দিন।

ঢাকা বোর্ডে সব থেকে বেশি ভুয়া আবেদন আবেদন জমা পড়েছে জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “ভুয়াদের গ্যাঁড়াকলে পড়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এদের অনেকেই পছন্দের ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।”

তবে একজনের নামে অন্যজনের অনলাইন বা এসএমএসে ভুয়া আবেদন করা খুব সহজেই ঠেকানো যাবে বলে মনে করেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ।

ভুয়া আবেদন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার বিষয়টি তুলে ধরলে এই অধ্যাপক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুষ্টু মানুষ এ ধরনের কাজ করতেই পারে।”

“এটা ঠেকানো কোনো ব্যাপারই না। সবার মোবাইল নম্বরটি যদি রেজিস্ট্রার্ড থাকে তাহলে ওই মোবাইলেই অনেক কিছু জানিয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি করে পাসওয়ার্ড দিয়ে এই ঝামেলা ঠেকানো সম্ভব।”

অনলাইন ও এসএমএসে প্রথমবারের মতো আবেদন নেওয়া ও ফল প্রকাশ করায় এবার এসব ঝামেলা হয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক কায়কোবাদ।