একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এই আদেশ দেয়।
খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।
ওই গম আমদানি ও সরবরাহ নিয়ে বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী রোববার এই রিট আবেদন করেন।
মঙ্গলবার আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন নাজমুল হুদা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
আদেশের পর তাপস কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই গম পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনসহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ‘কমপ্লায়েন্স’ (প্রতিবেদন) দাখিল করতে হবে। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন।
পরবর্তী আদেশের জন্য বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে আগামী ৫ জুলাই।
এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমদানি করা গম বন্দরে আসার পর সরকারের নীতিমালা অনুসারে তা চার সংস্থার ল্যাবেরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। তা উপযোগী বলে প্রতিবেদন পাওয়ার পরই গম বিতরণ শুরু করা হয়।”
তবে সম্প্রতি একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ আপত্তিও তুলেছে।
পুলিশের আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে ‘লুকোচুরি’ শুরু করে বলে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘পচা গম’ আমদানির অভিযোগ ওঠার পর বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়।
তবে ওই গম ‘পচা নয়’ দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে বলেছেন, “এ গম সম্পূর্ণ খাবার উপযোগী। খাদ্য অধিদপ্তর ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গমের মান নিয়ে আমি স্যাটিসফায়েড।”
রিট আবেদেনের শুনানিতে মাহবুব উদ্দিন খোকন সংবাদপত্রে প্রকশিত একাধিক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “এতে বলা হয়েছে আমদানি করা গমের মান খারাপ।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি), বাংলাদেশ শিল্প বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও খাদ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব ল্যাবের প্রতিবেদন তুলে ধরে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস বলেন, “গম পাঠানোর পর ৫৬টি জেলা থেকে আবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের আগেই সরকার পরীক্ষার পদক্ষেপ নেয়। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই গম মানসম্মত। কোথাও বলা হয়নি গম খাওয়ার উপযোগী নয়।”
এরপর মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ওই গমে বিষাক্ত রাসায়নিক আছে কিনা, তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
এক পর্যায়ে আদালত আবেদনকারীর আইনজীবীকে বলেন, সম্ভাব্য সব জায়গায় পরীক্ষা করা হয়েছে। আপনি দুটি পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা চেয়েছেন। এর মধ্যে একটির প্রতিবেদন (বারি) আদালতের সামনে আছে। তাহলে কেন আবার ল্যাব পরীক্ষা?
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “এর সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের জীবন জড়িত। এই গম জনস্বাস্থের জন্য হুমকি বা খাওয়ার যোগ্য কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর ভালো না নিম্নমানের গম পাঠিয়েছে তা আমরা জানি না।”
আদালত এ সময় প্রশ্ন করেন, “আপনি কি মনে করেন, এটি ম্যানিপুলেটেড রিপোর্ট? গম যদি বিষাক্ত হয় সরকার কি জনগণকে তা খাওয়াবে?”
এরপর ওই গম খাওয়ার উপযোগী কি না- সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনার আরজি জানান মাহবুব উদ্দিন খোকন।
পরে বিচারক বলেন, “রিট আবেদনকারী গমের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশ দিচ্ছি না, শুধু রুল জারি করছি।”